সাক্ষাৎকারে খুলনায় হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জনগণ ভোট ডাকাতদের বয়কট করবে

রাত পোহালেই খুলনা সিটিতে ভোট। নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শক্তিমত্তা ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অন্য চার প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন বলে দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় গত নির্বাচনের ফলাফলও সেই ইঙ্গিত দেয়। নির্বাচন নিয়ে হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনের পরিবেশ কেমন মনে হচ্ছে?

আবদুল আউয়াল: এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালোই মনে হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় আমরা কোনো হিংসাত্মক ঘটনা বা বাধা লক্ষ করিনি। প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার চেষ্টা করেছে। তাঁদের প্রস্তুতি দেখে আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে। এ জন্য ভোটারদের আমরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। অতীতে মানুষের ভোটের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। ভোটারদের আশ্বস্ত করছি, এবার ভোট দিতে পারবেন। আগামীকালের পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: খুলনায় মেয়র পদে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। আপনারা কী ভাবছেন?

আবদুল আউয়াল: দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ। যেহেতু মানুষ মুক্তি পেতে চায়, তাই খুলনা সিটি নির্বাচনে হাতপাখার বিকল্প নেই। শান্তিকামী মানুষের কাছ থেকে আমরা যে আশ্বাস পেয়েছি, তাতে আমরা মনে করি, হাতপাখার পক্ষে নীরব একটা বিপ্লব হবে; হাতপাখা জয়ী হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বিগত সিটি নির্বাচনে খুলনায় আপনারা ১৪ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিলেন।

আবদুল আউয়াল: গতবার তো ভোটই হয়নি। আমরা ১১টার সময় ভোট বর্জন করেছিলাম। চিহ্নিত ভোট ডাকাতেরা ভোট ডাকাতি করে, ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কাজেই সেই ভোট ডাকাতি যদি এবার না হয়, গোপন ও প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র যদি না হয়, ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হয়; তাহলে জনগণ ভোট ডাকাতদের বয়কট করবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কেমন হতে পারে?

আবদুল আউয়াল: এখন পর্যন্ত মানুষ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। মানুষ যদি পরিস্থিতি ভালো দেখে, কেন্দ্র দখলের বিষয় না থাকে; তাহলে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হবে বলে আমরা মনে করছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনারা বলে থাকেন বিএনপির ভোট আপনাদের বাক্সে পড়বে। বিএনপির ভোটাররা কি ভোটকেন্দ্রে আসবেন?

আবদুল আউয়াল: বিএনপির সাংগঠনিকভাবে যারা দায়িত্বশীল, তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। সব মানুষ তো আর বিএনপি করে না। সাধারণ মানুষ পরিস্থিতি দেখে ভোটকেন্দ্রে যাবে। তা ছাড়া বিএনপির কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে আছেন। তাঁরা তাঁদের সমর্থকদের কেন্দ্রে নেবেন। যেহেতু তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন, তখন তাঁরা মেয়রের ভোটও দেবেন। এ ক্ষেত্রে হাতপাখা ছাড়া তাঁদের ভোট দেওয়ার জায়গা তো নেই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: খুলনার ভোটারদের বড় একটা অংশ মনে করে আপনারা সরকারের ‘বি’ দল, সে ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য কী?

আবদুল আউয়াল: অনেক মানুষ এটা কল্পনা করে, ধারণা করে। এটা ভিত্তিহীন কথা। আমরা নির্বাচনে আসছি, এটাই যদি ‘বি’ টিমের দায়িত্ব হয়, তাহলে নির্বাচনে যদি কেউ না আসত, শুধু সরকারি দলের প্রার্থীই থাকতেন, তাহলে তো বিনা ভোটে তিনি জয়ী হতেন। তখন তো সরকারি দলকে আরও বেশি সহযোগিতা করা হলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনো না কোনো সরকারের অধীনেই হবে। জাতীয় নির্বাচনে এই সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না। আসলে আমাদের এটা বলে অপবাদ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ইভিএমে ভোট নিয়ে কী ভাবছেন?

আবদুল আউয়াল: শুরু থেকেই ইভিএমের বিপক্ষে আমরা বলছি। এখনো এই পদ্ধতির জন্য যোগ্য হয়নি জনগণ। আর খুলনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ভোটারকে ইভিএম বোঝানো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। ইভিএমের কারণে অনেকে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবেন না। অনেক ভোট নষ্ট হয়ে যাবে। গাজীপুরে মেশিন নষ্ট হওয়ায় ভোটারদের চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হয়েছে। খুলনায় যে যান্ত্রিক বিভ্রাট হবে না তা বলা যায় না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনারা প্রচারণার সময় উন্নয়ন ভোগান্তির কথা বলেছেন। বিগত পাঁচ বছরে খুলনার কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন চোখে পড়ে। এসব উন্নয়নকে আপনারা কীভাবে দেখেন?

আবদুল আউয়াল: প্রত্যেকে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে নিয়মানুযায়ী কিছু উন্নয়ন তো করবেনই। তবে আমি মনে করি, খুলনার উন্নয়ন যেটা হয়েছে, সেখানে দুর্নীতিযুক্ত হওয়ায় উন্নয়ন টেকসই হয়নি। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতি থাকলে উন্নয়ন টেকসই হওয়ার কথাও নয়। অপরিকল্পিত উন্নয়ন যতটুকু হয়েছে, সেটা জনভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। খুলনার মতো বড় শহরে মানুষ কর্মহীনতায় ভুগছে। কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা নির্বাচিত হলে খুলনাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে চাই। ইশতেহারের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের ভাবনা তুলে ধরেছি। জনগণ বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। আশা করছি, জনগণ আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবে।