দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা প্রবাসী ও স্বজনদের

জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলফেরত ভুক্তভোগী প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেন প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনেরাছবি: প্রথম আলো

বিক্ষোভের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্টের ক্ষমা

সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাবন্দী ও আটক হওয়া প্রবাসীদের মুক্তিসহ চার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করায় তাদের আটক করা হয়।

আজ রোববার বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার এই ঘোষণা দেন। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আটজন প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাঁরা সেখানেই অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

‘জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলফেরত ভুক্তভোগী প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের স্বজনেরাও অংশ নিয়েছেন।

এই আন্দোলনকারীরা সকালে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হন। পরে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এলে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। এতে বাংলামোটর হয়ে যমুনা অভিমুখের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের সহায়তায় আন্দোলনকারীদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। অন্যরা সেখানকার সড়কের অবস্থান নেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই বাংলাদেশিদের মুক্তির ব্যাপারে আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতেই সেই ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে আমিরাত প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দেন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন ১৪ জন।

আরও পড়ুন

আজ সগীর তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল সদর কারাগারে ২৫ জন ভাই বন্দী আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করানো হয়েছে। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত সগীর তালুকদার
ছবি: প্রথম আলো

ওই কর্মকর্তা মুক্তির ব্যাপারে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন উল্লেখ করে সগীর তালুকদার বলেন, অতীতেও আমাদের এই ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। আমরা এখন থেকে আমরণ অনশন পালন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাফনের কাপড় পরে আমরা অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

আরেক প্রতিনিধি এরশাদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ভাইদের মুক্ত করতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করব। আমাদের লাশ বাড়ি যাবে কিন্তু আমরা যাব না।’

আন্দোলনকারীরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে তাঁরা, তাঁদের স্বজনেরা জেলে যান, আটক হন। তাঁদের মধ্যে ১৮৯ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মুক্তিতে সহায়তা করেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু এখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে প্রবাসীরা কারাবন্দী-আটক আছেন। তাঁদের মুক্তির বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন