জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে ৮৮ জনের দণ্ড কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সামরিক আদালতে ৮৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং দেওয়া দণ্ড অবৈধ ঘোষণা করে তাঁদের দেশপ্রেমিক হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। ওই বিচারের মুখোমুখি ৮৮ ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্য ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল রিটটি করেন।

রুলে স্বাভাবিক চাকরির মেয়াদ হিসেবে তাঁদের (৮৮ জনের) বকেয়া বেতন, অবসরকালীন ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবাধিসহ তাঁদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষাসচিব, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মতিউর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

পরে আইনজীবী মো. মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সামরিক আদালতে ৮৮ জনকে দেওয়া সাজা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পাশাপাশি তাঁদের সাজা না হলে তাঁরা চাকরি করতে পারতেন ও পদোন্নতি পেতেন।

সাজা দেওয়ার কারণে তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত যোগ্যতা সাপেক্ষে কেন তাঁদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে না, তা–ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ১৪ অক্টোবর ‘মার্শাল রেগুলেশন’ জারি করা হয়। এর আলোকে সামরিক আদালত গঠন করা হয়। ওই আদালত ৫৬১ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১ হাজার ১৮৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাসহ চাকরি থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। বাকিরা সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্য। ৮৮ জনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ১৩ ব্যক্তির পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্য ও অন্য ভুক্তভোগীরা রিটটি করেন।

রিটের যুক্তি সম্পর্কে আইনজীবীর ভাষ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮৯ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের শাসমালকে বৈধতা দিয়ে পঞ্চম সংশোধনী আনা হয়েছিল। এই সংশোধনী উচ্চ আদালতে রায়ে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট অবৈধ ঘোষিত হয়। এরপর ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে হাইকোর্টের ওই রায় বহাল রাখেন। সুতরাং ১৯৭৭ সালের ১৪ অক্টোবরের রেগুলেশন দিয়ে রিট আবেদনকারীদের বিচার করা হয়েছিল, তাই ওই বিচারপ্রক্রিয়াই ছিল অবৈধ ছিল।