চার বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতার করা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মামলার আসামি শিক্ষকের নাম আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) পরিদর্শক মোক্তার হোসেন। আগামী ২৫ অক্টোবর এই আদালতে অভিযোগপত্রটি যাচাই-বাছাই করা হবে। পরে এটি গ্রহণের শুনানির জন্য সেখান থেকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলায়ও ওই শিক্ষক আসামি। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বাসা থেকে দিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই হত্যা মামলার তদন্ত করছে। দুটি মামলায়ই জামিনে আছেন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
২০১৮ সালের ১৭ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নেওয়ার আবেদন করেন ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান তানভীর। শুনানি শেষে আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সেটিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ এটির তদন্ত শুরু করে। পরে ডিবি পুলিশ তদন্ত করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সায়েন্স: সোশিওলজি অ্যান্ড কালচার নামে একটি জার্নালে ‘রিলিজিয়াস পলিটিকস অ্যান্ড কমিউনাল হারমোনি ইন বাংলাদেশ: আ রিসেন্ট ইমপাস’ শিরোনামে আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল আনোয়ার হোসেন বিভাগীয় সভাপতি বরাবর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন। এতে তিনি ওই প্রবন্ধ সংযুক্ত করেন। পরে গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, প্রকাশিত প্রবন্ধে একাধিকবার শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হলেও একবারও তিনি ‘জাতির জনক’ কিংবা ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছিল বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রবন্ধে।
জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্র কিংবা কাউকে হেয় করে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ হয়, এ রকম কোনো তথ্য কিংবা বক্তব্য জার্নালে লেখা হয়নি। বিষয়টি যেহেতু এখন বিচারাধীন, তাই আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।
মামলাটির তদারককারী কর্মকর্তা নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।