ঐক্য পরিষদের উল্লেখ করা হত্যাকাণ্ডগুলোর একটিতেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পায়নি সরকার
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সাড়ে চার মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ২৩ জনকে হত্যার যে তথ্য বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দিয়েছে, সে ঘটনাগুলো পুলিশের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাকি ২২টি ঘটনার প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে জানা গেছে। সেগুলোর একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও এ বিষয়ে কথা বলেন।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এই ১৭৪ সহিংসতার ঘটনায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯টি। এ ছাড়া ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; ১৫টি কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন; ৩৮টি বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক ট্যাগ’ দিয়ে অস্বীকারের প্রবণতা রয়েছে।
এ নিয়ে আজকের সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবিকে অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, উল্লিখিত ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আজাদ মজুমদার বলেন, যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত ইতিমধ্যে জানা গেছে, তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো ধরনের সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটি চুরি ও দস্যুতা সম্পর্কিত, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটি ক্ষেত্রে সাধারণ অপরাধ যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যু এবং বিদ্রূপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থেকে মৃত্যু, দুটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটি স্থানীয় লোকজনের সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধসংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু এবং একটি আত্মহত্যার ঘটনা।
প্রেস উইং বলেছে, একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে সেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই।
আজাদ মজুমদার বলেন, এই তালিকায় এমন ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়েছে, যিনি আসলে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বরে মারা গেছেন।
আজাদ মজুমদার বলেন, প্রতিটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। এই ২৩ ঘটনার ২টিতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে, সেই দুটিতে পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতিমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজাদ মজুমদার বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সহিংসতাকেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।