চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা

শিক্ষামন্ত্রী চলে যাওয়ার পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অচলাবস্থা নিরসন হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী আজ শনিবার ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের কাল রোববার থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় আছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত হলেও চারুকলা ইনস্টিটিউট নগরের বাদশা মিঞা সড়কে। ছাত্রছাত্রীরা ২২ দফা দাবিতে গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এক দফা দাবি দেন তাঁরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি মানা না হলে গত ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই দিন থেকে কার্যত অচল রয়েছে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সমাবর্তনসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ চট্টগ্রামে আসেন। মন্ত্রী দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করার সময় সেখানে যান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন।

শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ইনস্টিটিউট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিকেলে মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন ছাত্রছাত্রীরা
ছবি: প্রথম আলো

এরপর শিক্ষামন্ত্রী বেলা ৩টায় চারুকলা ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার ও সহ-উপাচার্য বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

শিক্ষামন্ত্রী চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত সংস্কারসহ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণে আশ্বাস দেন।

শিক্ষামন্ত্রী চলে যাওয়ার পর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের কাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিধি ও শৃঙ্খলা মেনে চলবে। ভবিষ্যতে কী করা যায়, তা ভবিষ্যতের অর্থনীতি বিবেচনা করে এগোতে হবে। সব সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তা বলা হচ্ছে না। তবে সিদ্ধান্ত একটাই, একাডেমিক কার্যক্রম চলবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন।

একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন উল্লেখ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য উপস্থাপন করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান না। এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সেখানে পাবলিক মানি জড়িত, সে বিষয়ে কথা বলছি। এই মুহূর্তে ফান্ডিংয়ের (তহবিল) প্রশ্নে...। চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সংগতি সরকারের নেই। বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারছি না। তবে অবকাঠামোগত সংস্কার করতে পারব। কিন্তু পুরো পরিবর্তন করার জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, রোববার থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। আর শিক্ষার্থীদের সমস্যা যেমন যাতায়াত ও আবাসন ব্যবস্থার সমস্যা নিরসন করা হবে। আর অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকৌশলী পাঠানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীও থাকবে। ইনস্টিটিউটের সংস্কার করা হবে।

তবে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় আছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ইনস্টিটিউট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিকেলে মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন ছাত্রছাত্রীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, তাঁদের আন্দোলন মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার। এই ছোট ক্যাম্পাসে থেকে যাওয়ার জন্য বা অবকাঠামোগত সংস্কারের জন্য আন্দোলন নয়। মন্ত্রীদের অনুরোধকে তাঁরা সম্মান করেন। তবে দাবি আদায়ে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।