ধারালো অস্ত্র হাতে আবার সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ

দুই পক্ষই লাঠিসোঁটা, রামদা, রড নিয়ে বেব হয় এবং পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ে
ছবি: সংগৃহীত

খাবার হোটেলে দুই কর্মীর মধ্যে তর্কাতর্কির জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষই ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এ ঘটে ঘটে। বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহত হয়ে ২১ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ হলো শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ‘বিজয়’ আর সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ‘সিক্সটি নাইন’। গত বছর ৩১ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর থেকে বিজয় উপপক্ষটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, আবু বকর ও ‘পদবঞ্চিত’ শাখাওয়াত হোসেন। আজ শেষের পক্ষটি সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

অন্যদিকে ক্যাম্পাসে আগে সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। বর্তমানে এ উপপক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম।

যেভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলসংলগ্ন একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে গিয়েছিলেন সিক্সটি নাইন উপপক্ষের কর্মী পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আজমির হোসেন আর বিজয় উপপক্ষের কর্মী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরী। মাহির যে টেবিলে খাচ্ছিলেন, সে টেবিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজমিরের মাহিরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।  

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সিক্সটি নাইনের নেতা–কর্মীরা শাহজালাল হল থেকে লাঠিসোঁটা, রামদা, রড ও ইটপাটকেল নিয়ে বের হন। আর বিজয়ের নেতা–কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হল থেকে একই ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষ জড়ানো অনেকের হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র
ছবি: সংগৃহীত

সংঘর্ষ নিয়ে যে যা বলছে

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তরে মাহির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর শরীরে আজমির ইচ্ছাকৃতভাবে ডাল ফেলেছে। তিনি এর প্রতিবাদ করায় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। এ কারণে তিনি আজমির হোসেনকে তাঁর মতো করে প্রতিহত করেছেন।

আজমির হোসেন বলেন, সামান্য একটু পানি মাহিরের শরীরে পড়েছিল। এরপর মাহির অকথ্য ভাষায় গালাগাল করলে তিনি এর প্রতিবাদ জানান। এতে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

বিজয়ের  নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রথম  আলোকে বলেন, সিক্সটি নাইনের নেতা–কর্মীরা ইচ্ছে করে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। তাঁদের কোনো দোষ ছিল না। তাঁরা শুধু প্রতিহত করেছেন।

একই দাবি করেন সিক্সটি নাইনের নেতা সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিজয়ের নেতারাই আগে লাঠিসোঁটা নিয়ে হল থেকে বের হয়েছে। তাঁরা প্রতিহত করেছেন। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, আহত ২১

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। খাবার হোটেলে তর্কাতর্কি থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে আমরা জানতে পেরেছি। কেউ আহতের খবর পাওয়া যায়নি।  যাঁরা দেশীয় অস্ত্র হাতে এ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন, তাঁদেরও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ছাত্রলীগের এ সংঘর্ষে ২১ জন আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২১ জনের মতো চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁদের শরীরে পাথর নিক্ষেপ, লাঠিসোঁটার আঘাতের চিহ্ন ছিল। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে৷ গুরুতর আহত কেউ নেই।’