করোনার টিকার পরীক্ষায় অংশ নিলে আত্মসম্মান বাড়ত

টিকা নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় গবেষণা করছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কে. জামান। প্রতিষ্ঠানটির টিকাবিষয়ক ৬৫টি গবেষণায় তিনি ছিলেন মূল গবেষক বা প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকীতে এ পর্যন্ত ২২৭টি গবেষণা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। তিনি ২০১৬ সাল থেকে পোলিওবিষয়ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কৌশলগত পরামর্শক দলের সদস্য। ২০১৭ সাল থেকে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোলিওবিষয়ক গবেষণা কমিটির সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশে ১০-১১টি টিকার পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে। এই বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল

  • একটি টিকা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর, কতটা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • টিকার উদ্দেশ্য লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষকে রোগ থেকে রক্ষা করা।

  • বাংলাদেশে রোগের প্রকোপ বেশি। জনসংখ্যাও বেশি। তাই এখানে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করার সুযোগ বেশি।

কে. জামান
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ছাত্রজীবনে কখনো কি ভেবেছিলেন যে আপনি টিকাবিজ্ঞানী হবেন? কোন সময়ে বা কীভাবে সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন?

কে. জামান: আমার জন্ম ও স্কুলজীবন ভারতে। কলেজজীবন বাংলাদেশে। স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করব। এমবিবিএস পড়ার সময় আমি সিদ্ধান্ত নিই যে আমি গবেষণা করব। চাঁদপুরে আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে কিছুদিন চিকিৎসা পেশার চর্চা করেছি। তারপর পুরোপুরি গবেষণায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ থেকে ১৯৯২ সালে এমপিএইচ এবং ১৯৯৯ সালে পিএইচডি এবং এডিনবরা ইউনিভার্সিটি থেকে এফআরসিপি ডিগ্রি নিই। আমার বিষয় ছিল সংক্রামক ব্যাধি। এসব ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করার সময় বুঝেছিলাম রোগ প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে টিকা। এটাই টিকাবিজ্ঞানী হওয়ার পটভূমি।

প্রশ্ন :

টিকা গবেষণার দুটি দিক আছে। একটি উদ্ভাবন, অন্যটি প্রয়োগবিষয়ক। আপনার গবেষণার বিষয় কোনটি?

কে. জামান: একটি টিকা উদ্ভাবনের পর তা মানুষের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহারের আগে চারটি পর্যায়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা বা ট্রায়াল হয়। আমি সেই কাজটি করি। যেমন রোটাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের পর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে এই চারটি ধাপের পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয়েছিল। চারটিতেই আমি ছিলাম।

একটি টিকা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর, কতটা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে—এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় নিয়েই আমার গবেষণা। যাঁরা টিকা উদ্ভাবন করেন, তাঁরা সাধারণত টিকার চূড়ান্ত ডোজ নির্ধারণ করেন না। একটি ডোজের পর অন্য ডোজ কত দিন পরে দিলে বেশি কার্যকর হবে, তার জন্যও গবেষণা দরকার হয়। এসব গবেষণাই আমি করি।

রোটাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবিত হয়েছিল অনেক দিন আগে, ১৯৮৮ সালে। কিন্তু সেই টিকা ব্যাপকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমরা এশিয়ায় ও আফ্রিকায় এ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করি। ২০০৯ সালে এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন ১১০টির বেশি দেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) এই টিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

একই কথা বলা যায় কলেরার টিকার ক্ষেত্রে। ১৯৮৫ সালে মতলবে গবেষণার মাধ্যমে কলেরা টিকা উদ্ভাবন করা হয়। কিন্তু তার ব্যবহার শুরু হয়েছে প্রায় ২০ বছর পরে। বিশ্বব্যাপী এটাই সাধারণ ধারা। একমাত্র ব্যতিক্রম বলা যায় কোভিড–১৯–এর টিকা। উদ্ভাবনের খুব অল্প সময়ের মধ্যে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন :

এ পর্যন্ত কোন কোন টিকার পরীক্ষা–নিরীক্ষা আপনি করেছেন বা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

কে. জামান: এ পর্যন্ত টিকা নিয়ে ৬৫টি পরীক্ষা–নিরীক্ষা আমি করেছি। এর মধ্যে রোটাভাইরাস, পোলিও, ফ্লু, হেপাটাইটিস–ই, যক্ষ্মা, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, নিউমোনিয়া, আরএসভি ও জাপানি এনকেফালাইটিস অন্যতম।

প্রশ্ন :

পোলিও বিশ্ব থেকে নির্মূলের পথে। এর পেছনে পোলিও টিকার ভূমিকা আছে। এই টিকার ডোজ নির্ধারণ এবং সময় নির্ধারণে আপনার ভূমিকাও অনেক বড়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির আপনি সদস্য। আপনার গবেষণার বিষয়ে কি একটু বিস্তারিত জানাবেন।

কে. জামান: এ পর্যন্ত পোলিও টিকা নিয়ে ১৭টি গবেষণা করেছি। শুরুর দিকে পোলিও টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সময়ের পার্থক্য ছিল ছয় থেকে আট সপ্তাহ। আমরা সময়ের পার্থক্য কমিয়ে আনার গবেষণা করেছিলাম বাংলাদেশ, সিরিয়া, লাওস, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে।

গবেষণা করে আমরা বলেছিলাম, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের সময়ের পার্থক্য এক থেকে দুই সপ্তাহ হলেও তা সমান কার্যকর। হঠাৎ কোথাও পোলিওর প্রকোপ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপনি বেশি সময় নিতে পারেন না। সময় কমিয়ে আনার বিষয়টি তাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসব মূল গবেষণার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি ২০১৬ ও ২০১৯ সালে আমাকে চার্লস সি শেফার্ড অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

পোলিওর জীবাণুর তিনটি ধরন আছে। এর মধ্যে টাইপ–২ বেশি বিপজ্জনক। এর প্রতিরোধক আইপিভি টিকার দাম অনেক বেশি। এর এক ডোজ ছিল ০.৫ এমএল। আমরা গবেষণা করে বললাম, এক ডোজ ০.১ এমএল হলে একই ফল পাওয়া যায়। আমরা একে বলছি ফ্রাকশনাল ডোজ। আগে যা একজনকে দেওয়া হতো, এখন তা পাঁচজনকে দেওয়া হচ্ছে। এই ফ্রাকশনাল ডোজ এখন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় দেওয়া হচ্ছে।

আমরা পোলিওর টিকা নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছি। এ কথাও ঠিক যে বিশ্ব থেকে পোলিও নির্মূলের পথে। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো দুই একটি দেশে পোলিওর অস্তিত্ব এখনো আছে।

প্রশ্ন :

ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা আছে। কী ছিল সেই গবেষণায়?

কে. জামান: আমরা দেখিয়েছিলাম যে গর্ভবতী নারীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দেওয়া হলে এটি ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের অসুস্থতা ৬২ শতাংশ কমাতে পারে এবং শিশু ও মায়েদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণের এক-তৃতীয়াংশ কমে। এর ফলে নবজাতকের জন্মের সময়ের ওজনও বৃদ্ধি পায়। এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভবতী নারীদের ফ্লু টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেয়। এই গবেষণার জন্য কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল আমাকে ২০১২ সালে ব্রুস স্কোয়ারস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

প্রশ্ন :

ওষুধ ও টিকা নিয়ে গবেষণার মধ্যে বিশেষ পার্থক্যের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?

কে. জামান: ওষুধ নিয়ে গবেষণা আর টিকা নিয়ে গবেষণার মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য আছে। টিকার উদ্দেশ্য লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষকে রোগ থেকে রক্ষা করা। তাই টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বহু মানুষের ওপর গবেষণা করতে হয়।

আমার মতে, একটি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক কম থাকে। ওষুধ নিয়ে গবেষণাও তাই কম মানুষের ওপর হতে দেখা যায়। টিকার গবেষণা ওষুধের গবেষণার চেয়ে কঠিন ও জটিল।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান টিকা নিয়ে খুব বেশি কাজ করেছে বলে শোনা যায় না। কেন অন্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে না?

কে. জামান: অতীতে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগ বা গুরুত্ব গবেষণার ওপর ছিল না বা কম দেখা গেছে। এখন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।

টিকার গবেষণায় বিশেষজ্ঞদের কমিটি থাকা দরকার হয়। কমিটির কাজ গবেষণার যথার্থতা নিরূপণ করা, নৈতিক বিষয়গুলো দেখা। গবেষণার জন্য অবকাঠামো চাই। এর জন্য তহবিল দরকার। আর দরকার বিজ্ঞানী। বাংলাদেশেও ভবিষ্যতে টিকা নিয়ে গবেষণা বাড়বে এমন কথা বলার মতো সময় এসেছে। আইসিডিডিআরবির দীর্ঘ বর্ণাঢ্য গবেষণার ইতিহাস, গবেষকদের উৎসাহ প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।

প্রশ্ন :

দেশে টিকা উদ্ভাবনের কোনো গবেষণার কথা খুব একটা শোনা যায় না। কেন উদ্ভাবন নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না?

কে. জামান: টিকা উদ্ভাবনের জন্য বহু কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন। যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা চাইবেন বিনিয়োগ থেকে লাভবান হবেন। যাঁরা টাকা বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা চান গবেষণাটি হতে হবে মানসম্পন্ন। মানসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান থাকলেই সেখানে বিনিয়োগ হবে। তা না হলে কেউ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। নিপাহ ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবন বিষয়ে বৈশ্বিক আলোচনা আছে। এ গবেষণা বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রশ্ন :

কোভিড–১৯ টিকার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে। কিন্তু এই টিকার বৈশ্বিক জ্ঞানে বাংলাদেশ অবদান রাখতে পারল না। কোভিড–১৯ টিকার পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ থাকলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। আপনার মন্তব্য কী?

কে. জামান: করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করার জন্য বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড ঘটেছে বিশ্বে। সিনোভ্যাক (চীনের টিকা) ও কোভ্যাক্সিন (ভারতের টিকা) টিকার পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রস্তাব বাংলাদেশের কাছে এসেছিল। বিজ্ঞানীরা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এমনকি জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা–নিরীক্ষার কাজ মাঠ পর্যন্ত গড়ায়নি।

আমরা যদি পরীক্ষা–নিরীক্ষায় অংশ নিতে পারতাম বা কোনো টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশীদারত্ব থাকত তাহলে, দেশের মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যেত। বিষয়টি গৌরবেরও হতো, বাংলাদেশের আত্মসম্মান বাড়ত। নতুন বিজ্ঞানীরা উৎসাহী হতেন।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে টিকা নিয়ে গবেষণার চ্যালেঞ্জগুলো কী? এখানে সুবিধা কী আছে।

কে. জামান: টিকা নিয়ে মাঠে কাজ করার সময় প্রধান চ্যালেঞ্জ কোল্ড চেইন বজায় রাখা। টিকা ঠিক সময়ে বা ঠিক সময় অন্তর দিতে হবে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় টিকা রেখে সময় মেনে টিকা মানুষের কাছে পৌঁছানো অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। বৃষ্টি থাকে, কোথাও নদীপথে যেতে হয়। একবার আমার গবেষক দল নদীপথে ঝড়–বৃষ্টির কবলে পড়েছিলেন। নৌকা ডুবে গিয়েছিল। কিন্তু গবেষক দলের সদস্যরা টিকা ও টিকাসংক্রান্ত কাগজপত্র ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করেছিলেন।

সুবিধা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণার বৈশ্বিক মূল্য অনেক বেশি। বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের গুরুত্ব এই কারণে বেশি যে বাংলাদেশে রোগের প্রকোপ বেশি। জনসংখ্যাও বেশি। তাই এখানে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করার সুযোগ বেশি।

প্রশ্ন :

এখন কোন কোন টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। নতুন কোনো টিকা কি আসছে?

কে. জামান: দেশের পাঁচটি জায়গায় আমাদের টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। হেপাটাইটিস ই নিয়ে একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে গর্ভবতী নারীদের ওপর। জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধে একটি টিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আমরা বহু বছর ধরে বিসিজি টিকা দিয়ে আসছি। কিন্তু এই টিকা জীবনব্যাপী সুরক্ষা দেয় না। আমরা যক্ষ্মার একটি নতুন টিকা নিয়ে কাজ করছি। একবার যক্ষ্মা হয়ে সুস্থ হয়েছে, এমন মানুষকে এই টিকা দিলে সারা জীবন আর যক্ষ্মা হবে না।

এ ছাড়া শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষার জন্য একটি টিকার গবেষণা করছি, যেটি দেওয়া হচ্ছে গর্ভবতী মাকে। গর্ভবতী মায়ের প্লাসান্টা বা গর্ভফুল থেকে টিকা যাবে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে। এভাবেই নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পাবে নবজাতক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশু। এ রকম ১০–১১টি টিকা নিয়ে আমি এখন কাজ করছি। আমার সঙ্গে আছে প্রায় সাড়ে তিন শ বিজ্ঞানী, গবেষক ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষিত একটি দল।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক গবেষণার সঙ্গে আপনি যুক্ত ছিলেন, এখনো বেশ কয়েকটি গবেষণা চলছে। গবেষণার বাইরে আপনি আর কী কাজ করেন। অবসর সময় কাটান কী করে?

কে. জামান: আমার একটিমাত্র সন্তান, মেয়ে। সে তড়িৎ প্রকৌশলী, থাকে আমেরিকায়। কথা হয় নিয়মিত। আমরা স্বামী–স্ত্রী দেশে থাকি। গবেষণার বাইরে আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথে পড়াই। এটুকুই।

গবেষণা নিয়েই আমার দিন, সপ্তাহ, মাস পার হয়। চলমান গবেষণাগুলো নিয়মিত দেখভাল করতে হয়, তার নানা হিসাব–নিকাশ, নানা ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গবেষণা প্রবন্ধ লিখতে হয়। বছরে এখন গড়ে ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে ছাপা হয়। এ ছাড়া অনেক গবেষণা প্রবন্ধ আমাকে সম্পাদনা করতে হয়। আবার নতুন নতুন গবেষণার প্রকল্প দলিলও তৈরি করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ও নীতিনির্ধারনী সভায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সত্যি বলতে কি আমার কোনো অবসর সময় নেই।