প্রতিবার ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়েন। আর এ সময় বাসের টিকিটের জন্য বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের। এবারও ঈদ সামনে রেখে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাসমালিকদের বিরুদ্ধে। যাত্রীরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই বেশি ভাড়া দিচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, এসি (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) বাসগুলোর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধ দমনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৩৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, গণপরিবহনের জন্য ভাড়ার হার ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ করতে পারিবে তবে শর্ত থাকে যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধাসংবলিত গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে উহা প্রযোজ্য হইবে না: তবে আরও শর্ত থাকে যে সরকার বা কর্তৃপক্ষ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধাসংবলিত গণপরিবহনের ভাড়া যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণের যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।’
৩৪(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো গণপরিবহনের মালিক, চালক, কন্ডাক্টর, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপধারা (২)–এর অধীন নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করিতে পারিবে না।’ এই আইনের ৮০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৩৪–এর উপধারা (৩) ও (৪)–এর বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) মাসের কারাদণ্ড, বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কর্তন হইবে।’
সহজভাবে বললে, গণপরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করা একটি অপরাধ। কেউ যদি এমনটা করে, তাহলে তাঁকে অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
ঈদের আর অল্প কয়েক দিন বাকি। এবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। তাই অনেকে এসি বাসে ভ্রমণের চিন্তাভাবনা করেছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এসি বাসগুলোর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। লক্ষণীয় বিষয় হলো, সড়ক পরিবহন আইনে এসি বাসগুলোর ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাসমালিকদের একরকম ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ৩৪(২) ধারার শর্ত অনুযায়ী, সরকার গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধাসংবলিত গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। এতে আরও বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তা যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারবে। কিন্তু সরকার বা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সচরাচর এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না। এ কারণে আইনের ‘ফাঁক’কে কাজে লাগিয়ে বাসমালিকেরা এসি বাসের ভাড়া নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
বাড়তি ভাড়া নেওয়া আইন অনুযায়ী একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই আইনের তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, আইনটি প্রয়োগের ব্যাপারে সরকার বা কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সামর্থ্যের ঘাটতি আছে। এর ফলে বাড়তি ভাড়া নিয়ে জনগণের ভোগান্তি কমছে না।