বাংলাদেশে নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষার অনেকগুলো বিপন্ন। এই ভাষাগুলো রক্ষা করতে হবে এবং বিকশিত করার সুযোগ দিতে হবে। সরকার সম্প্রতি এসব বিপন্ন ভাষা ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নিয়েছে। এক আলোচনা সভায় এসব ভাষা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে ‘বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ফন্ট ও কিবোর্ড নির্মাণ’ শিরোনামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পের উদ্যোগে এ সভা হয়।
প্রকল্পের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৪টি বিপন্নপ্রায় ভাষাসহ ৪০টি নৃগোষ্ঠী ভাষা সংরক্ষণ ও ডিজিটালাইজেশনের কাজ করছে তারা। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনার সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, কারও মাতৃভাষার বিলুপ্তি কাম্য নয়। এ কারণে শুধু রক্ষা করা নয়, এসব ভাষাকে বিকশিত করার ব্যবস্থাও নিতে হবে, যাতে ভাষাগুলো প্রজন্মান্তরে সুরক্ষিত থাকে।
নৃগোষ্ঠীদের ভাষা রক্ষার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সফল বাস্তবায়ন হলে, দেশের সবার মাতৃভাষার সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিসিসির সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল কবির।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ‘বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী ভাষার ডিজিটাইজেশন’ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে তারা। এর মধ্যে নির্ধারিত ৪০টি ভাষার ৩৭টির নমুনা সংগ্রহ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের নৃগোষ্ঠী ভাষাগুলোর ডিজিটাল আর্কাইভিংয়ের পাশাপাশি নৃতাত্ত্বিক ভাষাভাষী মানুষেরা কিবোর্ডে নিজ মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল জগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন।
সভায় চাকমা, মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা ও সান্তালি ভাষার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। তাঁরা ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজ ভাষা ও বর্ণমালায় লিখতে গিয়ে কী কী সমস্যা হয় সেগুলো তুলে ধরেন এবং তাঁদের সুপারিশগুলো জানান।
গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব করিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকাইয়া উর্দু ভাষার কবি ও লেখক সৈয়দ আফজাল হোসেন, উর্দু অনুবাদক ও লেখক জাভেদ হুসেন, দলিত নেতা ও তেলেগু ভাষা প্রতিনিধি ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু এবং বেদে জনগোষ্ঠীর নেতা কাউন্সিলর ও ঠার ভাষা প্রতিনিধি রমজান আহমেদ।