আজ শনিবার সকালে ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি (আইপিএলডি) আয়োজিত একটি সেমিনারে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ
ছবি: প্রথম আলো

ভোটকেন্দ্র নিরাপদ জায়গা নয়। কেন্দ্রে সন্ত্রাসের কারণে হতাহত হওয়ার ভয় রয়েছে। ভোটের জন্য কেউ মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে চান না। তাই অনেকে কেন্দ্রের কাছে থেকেও ভয়ভীতির কারণে ভোট দিতে যান না। এ ছাড়া গত দুটি নির্বাচনে মানুষ কেন্দ্রে গিয়েও নিজের ভোট দিতে পারেননি। তাই মানুষ ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়েছেন।

এসব কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। আজ শনিবার সকালে ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি (আইপিএলডি) আয়োজিত একটি সেমিনারে মানুষের ভোটকেন্দ্রবিমুখতার এসব কারণ তিনি তুলে ধরেন।

‘বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্রায়ণের লক্ষ্যে কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব’ শিরোনামে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশে পূর্ণ গণতন্ত্রায়ণের লক্ষ্যে রাষ্ট্র, সংবিধান, শাসন-প্রশাসন ও নির্বাচন বিষয়ে তিনি পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জীবন-জীবিকার কারণে অনেকে স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থানের বাইরে থাকেন, তাই সশরীর উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার ভোটারদের একটি বড় অংশ প্রবাসী শ্রমিক, যাঁদের কেন্দ্রে এসে ভোটদান সম্ভব নয়। কারও কারও জন্য আবার বয়স, শারীরিক অবস্থা কিংবা যাতায়াতের অসুবিধা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব কারণ বিবেচনায় তিনি নির্বাচন কমিশনকে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি উন্মুক্ত এবং প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ভোট দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা চালুর অনুরোধ করেন।

কুমিল্লা শহরের সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনে (২০১২, ২০১৭ ও ২০২২ সালে) একটি বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি নিয়ে তিনি একটি অনুসন্ধানী জরিপ চালিয়েছিলেন। সেই জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১২ সালে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ সদস্য ভোটকেন্দ্রে যাননি। তাঁদের কেউ কেউ ভোটের আগের রাতে শহর ছেড়ে পিকনিকও করেছেন। ওই বছর ভোটের আগের রাতে কুমিল্লা শহর ফাঁকা ও ভুতুড়ে হয়ে গিয়েছিল।

২০১৭ সালে কোনো ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল না। এরপরও ভোট কমে গিয়েছিল। ভোট পড়েছিল ৬২ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে আরও কমে গিয়ে ভোট পড়ার হার ৫৭ শতাংশে নামে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত গ্রাম আদালতের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গ্রাম আদালত’ শিরোনামে যে আইনটি কার্যকর আছে, তাতে সত্যিকারের বিচার নিশ্চিত করা যায় না। কারণ, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত প্রার্থী নিরপেক্ষ বিচার করতে পারেন না। এ ছাড়া তাঁদের আইন নিয়ে আলাদা কোনো প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা সালিস করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। জনগণের বিচার পাওয়ার কাজটি সহজ করতে তিনি উপজেলা পর্যায়ে আদালত নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সারা দেশে অন্তত চারটি জায়গায় উচ্চ আদালতের বেঞ্চ চালুর প্রস্তাবও করেন তিনি।

প্রশাসন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন, বিচার, অর্থ, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জাতীয় বিকেন্দ্রীকরণ নীতি প্রণয়ন এবং স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইপিএলডির সভাপতি ফজলুল আজিম। অন্যদের মধ্যে আইপিএলডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আবদুল লতিফ মন্ডল ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ আহমদ মজুমদার বক্তব্য দেন। তাঁরাও তোফায়েল আহমেদের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এ ছাড়া সেমিনারে এহসান শামীম, তাহমিন বানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।