উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেও ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি রাখা যাবে না

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আজ বুধবার সচিবালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি রাখতে পারবেন না। এমনকি উত্তরাধিকার সূত্রে বেশি জমি পেলেও সেখান থেকে নিজের পছন্দমতো ৬০ বিঘা কৃষিজমি রেখে অতিরিক্ত জমি ছেড়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত কৃষিজমি নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার খাস করতে পারবে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান ও যুগ্ম সচিব মো. খলিলুর রহমান। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ভূমি সংস্কার আইন ২০২৩ নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  জানান, একসময় জমিদারদের অধীনে অধিকাংশ জমি ছিল। কিন্তু ১৯৫০ সালে নতুন নিয়ম করে বলা হয়, কারও ৩৭৫ বিঘার বেশি কৃষিজমি থাকতে পারবে না। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা কমিয়ে ১০০ বিঘা করেন। আর ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা ৬০ বিঘা করেন। কিন্তু অধ্যাদেশের আলোকে বিধিমালা না হওয়ায় এটি এত দিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নতুন আইন করে সরকার তা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যার মূল কথা হলো কোনো একক ব্যক্তির ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি থাকতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা উত্তরাধিকার জমির বিষয়ে উদাহরণ তুলে ধরে জানতে চেয়েছিলেন কোনো ব্যক্তির ৬০ বিঘা কৃষিজমি আছে, কিন্তু তখন তাঁর বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে আরও ৬০ বিঘা বা কমবেশি কৃষিজমি পেলেন। তখন কী হবে? এর জবাবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও ভূমিসচিব খলিলুর রহমান যে উত্তর দেন, তার মূল কথা হলো, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া কৃষিজমি এবং তাঁর নিজের কৃষিজমির মধ্য থেকে তাঁর সুবিধামতো সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা জমি রাখতে পারবেন।

এ বিষয়ে সচিব খলিলুর রহমান আইনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত জমি ৬০ বিঘার বেশি হলে ভূমির মালিক নিজের পছন্দ অনুযায়ী ৬০ বিঘা ভূমি রাখতে পারবেন। অবশিষ্ট ভূমি সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ দিয়ে খাস করতে পারবে। তবে সমবায় সমিতিসহ ৮টি ক্ষেত্রে ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। ভূমিমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়টি বিধিমালায় ঠিক করা হবে।  

পরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করতে গিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমি না রাখার বিধানটি নতুন নয়। ১৯৮৪ সালে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশও ছিল। কিন্তু ৪০ বছরেও বিধিমালা না হওয়ায় সেটি বাস্তবে কার্যকর হয়নি। এর মধ্যে আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনের সময়ে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল করে এখন নতুন করে আইন করা হচ্ছে। তাতেও ওই বিষয়টি রয়েছে।