চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

শিক্ষার্থীরা চাইলে ভালো নির্বাচন হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না

৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হতে যাচ্ছে বুধবার। ভোটের দুই দিন আগে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোশাররফ শাহ

প্রথম আলো:

চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ৩৫ বছর আগে। এবারের নির্বাচনটি তাই নানা দিক থেকে ঐতিহাসিক। এই নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে কী অভিজ্ঞতা হলো?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: আমার কাছে সবই নতুন। আমি ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছি। আবাসিক শিক্ষক পর্যন্ত হতে পারিনি। ৪০ বছর আমার দায়িত্ব ছিল শ্রেণিকক্ষের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি—এগুলো বণ্টিত হয়। তথাকথিত বর্ণদলের ছদ্মাবরণে যে রাজনীতি প্রচলিত রয়েছে, সে রাজনীতির দলীয় পরিচয়ের পরিমাপে সুযোগ-সুবিধা বণ্টিত হয়। আমি ছিলাম বর্ণহীন শিক্ষক। সে জন্য চার দশক শিক্ষকতা ছাড়া শ্রেণিকক্ষের বাইরে কোনো দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়নি।

প্রথম আলো:

নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা আছে?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: এখন পর্যন্ত নেই। ছাত্ররাই এই অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। সামনেও থাকবে কি না, সেটাও নির্ভর করবে ছাত্রদের ওপর। তাঁরা যদি চান, আজকেই পরিবেশ নষ্ট হবে। তাঁরা যদি চান নির্বাচন ভালো হবে, তাহলে ভালো হবে। আমরা শুধু সহযোগী।

প্রথম আলো:

প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: এ বিষয়ের প্রমাণ দেন। ছাত্রশিবির কি টাকা দিয়েছে? কেউ যদি নির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারে ব্যবস্থা নেব।

প্রথম আলো:

নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হবে?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: শিক্ষার্থীরা চাইলে ভালো নির্বাচন হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। সব শিক্ষার্থী চাইছেন নির্বাচনটা হোক। তাঁরা জাতীয় নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনে ভোট দেননি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
ছবি: জুয়েল শীল
প্রথম আলো:

সব ভোটার কি ভোট দিতে আসতে পারবেন?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: এটা ভোটারদের ওপর নির্ভর করবে। আমরা তাঁদের নিরাপত্তার সুনিশ্চয়তা দিয়েছি। আমরা শাটল ট্রেন বাড়িয়েছি। বাস দিয়েছি। এখন যদি কেউ মনে করেন আসব না, তাহলে তাঁকে জোর করে আনতে পারব না। তাঁদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এটা প্রার্থীরা করবেন। আমরা এ নির্বাচনের প্রার্থী নই। আমাদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমরা আসার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারলাম কি না। উত্তর হচ্ছে, আমরা পেরেছি। ভোটাররা যদি আসেন, কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না।

প্রথম আলো:

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কী?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। সবাইকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে হবে। নানা ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। তবে আমাদের শক্তির জায়গাটা হলো সবাই চাচ্ছে নির্বাচনটা হোক। এই নির্বাচন যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) হয়, এর কৃতিত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমি দেব না। এটা দেব শিক্ষার্থীদের।

প্রথম আলো:

আমরা দেখছি, প্রার্থীরা বহুতল ভবন, স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটের পর সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জয়ী প্রার্থীরা চাপ দেবেন আপনাকে। এক বছরে পূরণের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত বলে আপনি মনে করেন?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: এটা বিচার করার দায়িত্ব আমাদের নয়। যেকোনো নির্বাচনে ভালো প্রতিশ্রুতি দেওয়া একটা কৌশল। তাঁরা তাঁদের কৌশল অনুযায়ী কাজ করছেন। আমরা কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সেটা জিজ্ঞেস করুন। আমাদের ১ নম্বর উদ্দেশ্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক ইনস্টিটিউশন হিসেবে গড়ে তোলা। এটার রাজনৈতিক রূপ কমিয়ে একাডেমিক রূপ দেওয়া। আমি সরকারের সামনেও এই কথা বলেছি যে শিক্ষকরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি ভয় পাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্ষতি করছে শিক্ষকরাজনীতি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
ছবি: জুয়েল শীল
প্রথম আলো:

চাকসু নির্বাচন কি প্রতিবছর হবে?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: এই গ্যারান্টি আমি কীভাবে দেব? ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে। আমরা এটাকে ক্রমান্বয়ে নিয়মিত করার চেষ্টা করব।

প্রথম আলো:

নির্বাচন নিয়ে আপনার ওপর কারও কোনো চাপ আছে?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: কোনো চাপ নেই। বরং সহযোগিতা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছে। আমরা অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। সেগুলো আমরা এখানে অ্যাপ্লাই (প্রয়োগ) করছি, যাতে একই সমস্যা মোকাবিলা করতে না হয়। এরপরও একটা জিনিস সফল করতে গেলে সবার সহযোগিতা লাগে। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তেমন একটি জিনিস ভন্ডুল করার জন্য বেশি কষ্ট করা লাগে না। একটা ঘটনাই যথেষ্ট। দু-তিনটা ছাত্রই এটা করতে পারে। বাংলাদেশের যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া সবচেয়ে সহজ। মূল ফটকে একটা তালা দিতে হবে, শাটল ট্রেনের চালককে অপহরণ করবে। এগুলো কঠিন কাজ না। আপনারা আগেও দেখেছেন। ছাত্ররা চাইলে করতে পারেন। তাঁরা এটা করছেন না। এ কারণে আমরা কৃতজ্ঞ।

প্রথম আলো:

চাকসু নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: আমার সবকিছু নিয়েই ইতিবাচক প্রত্যাশা। একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে। সবাই নির্বিঘ্নে এসে ভোট দেবেন।

প্রথম আলো:

সময় দেওয়ার আপনাকে ধন্যবাদ।

মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার: আপনাকেও ধন্যবাদ।