বাড়ি হোক পরিবেশবান্ধব, নগর হোক সবুজ

রাজধানীতে সবুজের দেখা খুব কমই মেলে। ইট, পাথর, কংক্রিটের দেয়ালে ঠাসা এ শহর
ছবি: সংগৃহীত

সবুজ-শ্যামল, সুজলা-সুফলা আমাদের বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদেও ভরা। তবে যুগের পালাক্রমে হুমকির মুখে পরিবেশ। এখন ঋতুবৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষ। উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু তা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জীবনের তাগিদে প্রয়োজন বাসস্থান। বাড়ি তৈরিতে যেমন বিভিন্ন উপকরণ দরকার, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষত রেখেই উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তবে আশার কথা, বর্তমানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নাগরিকেরা অনেক সচেতন।

স্বপ্নের আবাসনটি যদি মনের মতো হয়, তাহলে বসবাস হবে স্বপ্নময়। স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জান্নাতুল ফেরদৌস বিন্তি জানান, ‘ভালোভাবে বাঁচার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য-বস্ত্রের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি বাসযোগ্য পরিবেশ। যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত পরিবেশের কোনো রকম ক্ষতি না করে নিরাপদ নির্মাণ করা।’

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ‘বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন, সম্পদ নিঃশেষ হওয়া, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া জরুরি। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ও দূষণের ভয়াবহতা বিবেচনা করে পরিবেশবান্ধব নতুন নতুন নির্মাণপদ্ধতি ও কলাকৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানিসংকটের বিষয় মাথায় রেখে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণ স্বাস্থ্যসম্মত, কাঁচামাল ও শক্তিসাশ্রয়ী। নগরায়ণের ফলে প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরে মানুষ বাড়ছে। এসব মানুষের আবাসন চাহিদা পূরণ করতে একের পর এক গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প। এর মধ্যেই আমাদের সবুজ আবাসন নির্মাণ করতে হবে।’

সকালে ঘুম থেকে উঠে মৃদুমন্দ নির্মল বাতাসে হাঁটা, বিকেলের নরম রোদে ছাদবাগানে সময় কাটানো কিংবা রাতের তারাভরা আকাশ উপভোগ—কংক্রিটের নগরীর অনেক বাসিন্দাই স্বপ্ন দেখেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টটি এমন হবে। কর্মব্যস্ত দিন শেষে, মন প্রফুল্ল রাখতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ আজকাল মানুষ খোঁজে। কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখা যায়, সেই সঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট, ছাদ, পার্কিং, এমনকি লবিতে কতটা সবুজের ছোঁয়া দেওয়া যায়, এ ভাবনায় ব্যস্ত সবাই।

এ প্রসঙ্গে জান্নাতুল ফেরদৌস বিন্তি বলেন, ‘একটা সময় গাছপালার সবুজ আমাদের ঘিরে রাখত। আর এখন একটুকরা সবুজ প্রকৃতির আশায় ছুটতে হয় দূর থেকে দূরের কোনো গ্রামে। রাজধানীতে সবুজের দেখা খুব কমই মেলে। ইট, পাথর, কংক্রিটের দেয়ালে ঠাসা এ শহর। বারান্দায় দাঁড়ালে কিংবা জানালায় চোখ রাখলে একটুকরা আকাশের দেখা পাওয়া ভার। একটা সময় ছিল, যখন বাড়ির উঠানে থাকত ফুলের বাগান, পেছন দিকে থাকত ফল কিংবা সবজির আবাদ, এখন যা শুধুই স্মৃতি।’

বর্তমানে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ফ্ল্যাটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা। বাড়ি নির্মাণের সময় সামনে-পেছনে আলো আসার জন্য পর্যন্ত জায়গা রেখেই নকশা করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব আবাসন ও আধুনিক নগরায়ণের পাশাপাশি গুণগত মান বজায় রেখে প্রায় প্রতিটি আবাসন প্রতিষ্ঠান অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণে সচেষ্ট রয়েছে।

কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন তাঁরা পরিবেশবান্ধব আবাসনের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ কারণেই নকশার সময় থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে অ্যাপার্টমেন্টে পর্যাপ্ত সবুজের ব্যবস্থা রাখা হয়। ঘরের ভেতর-বাইরে—সব জায়গাতেই যতটা সম্ভব সবুজ রাখার দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।