রাতে হোস্টেল ছাড়ছেন চবি চারুকলার শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হোস্টেল ছেড়ে বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ফটকের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা।
এর আগে বিকেল পাঁচটায় ইনস্টিটিউটে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে আলাদাভাবে রাত দশটার মধ্যে হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের আবাসন ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা হোস্টেল ছাড়ার বিষয়টি জেনেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো কিছু জানায়নি। রাত নয়টার পরে তাঁদের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়ে হোস্টেল ছাড়তে বলা হয়। এরপর তাঁরা হোস্টেল থেকে বের হয়েছেন।
রাত সাড়ে দশটায় শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা হোস্টেলের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাত নয়টা দশ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়ে হোস্টেল ছাড়ার বিষয়টি জানানো হয়। এখন রাতে কোথায় থাকবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। হোস্টেলে থাকলে প্রশাসন পুলিশ নিয়ে এসে হয়রানি করতে পারে। তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে ফটকের বাইরে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ওয়ার্ডেন শুব্রত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি সব শিক্ষার্থীদের আগে না জানানো হলেও তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছিলেন৷ সাতটার দিকে কিছু শিক্ষার্থীকে বিষয়টি তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন। পরে রাত নয়টার দিকে আবার জানান।
লিখিত নোটিশ না দেওয়া ও সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে সুব্রত দাশ বলেন, ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ থাকার কারণে তিনি সশরীরে আসেননি। আর অল্প সময়ের মধ্যে লিখিত নোটিশ তৈরি করাও সম্ভব ছিল না।
এদিকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জহির রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, চলমান আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে হঠাৎ করে ইনস্টিটিউটকে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে তাঁদের আন্দোলন থেমে থাকবে না। তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলনরত চারুকলার আরেক শিক্ষার্থী শিহাব শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, কর্তৃপক্ষ ইনস্টিটিউট বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের বিষয়ে কিছু বলেনি। তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার দাবিতে দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে ফটকে তালা দিয়ে ইনস্টিটিউট অবরোধ করে রেখেছিলেন তাঁরা।
চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩ জন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। ছাত্রীদের জন্য মাত্র একটি শৌচাগার আছে। আবাসন সুবিধা পান মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী। গ্রন্থাগারে বই নেই। ডাইনিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চান।