শীতের তীব্রতা বেড়েছে তিন কারণে

কনকনে ঠান্ডায় শীতের পোশাক পরে বাবার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছে শিশুটি। গতকাল রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়মঈনুল ইসলাম

ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস, কোথাও কোথাও সূর্যের দেখা নেই—দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার অবস্থা এখন এমনই। উত্তরের পাশাপাশি দেশের অন্য অঞ্চলেও শীতের তীব্রতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি আজ রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন গতকাল শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য গত দু–তিন দিনে কমে গেছে। বাতাসের গতিবেগও বেড়েছে। সেই সঙ্গে ওপরের ঠান্ডা বাতাস ভূমির দিকে নেমে এসেছে—মূলত এই তিন কারণে শীতের অনুভূতি তীব্র হয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। আবহাওয়ার এমন আচরণ বয়স্ক ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। অনেকেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। গতকাল দুপুরে দিনাজপুর শহরের গণেশতলা এলাকায় শীতবস্ত্রের দোকানে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন ঠান্ডা, মনে হচ্ছে বিছানায় কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে। ঠান্ডায় মোটরসাইকেল চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

এমন ঠান্ডা, মনে হচ্ছে বিছানায় কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে। ঠান্ডায় মোটরসাইকেল চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।
আবু বক্কর সিদ্দিক, দিনাজপুর শহরের গণেশতলার বাসিন্দা

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুর শহরে গতকাল দুপুরে কথা হয় ইজিবাইকচালক রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় লোকজন কম বের হচ্ছেন। আয় কমে গেছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালিয়ে তাঁর আয় হয়েছে মাত্র ৮৫ টাকা। অন্যান্য সময়ে কম করে হলেও এই সময়ে ২০০ টাকা হতো।

দিনাজপুরের মতোই একই পরিস্থিতি চুয়াডাঙ্গায়। সেখানকার স্থানীয় লোকজন বলছেন, গতকাল ভোরে অনেক এলাকায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরেছে ঘন কুয়াশা। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিজানুর রহমান অন্যান্য দিনের মতো গতকালও ভোর থেকে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তীব্র শীতে ঘর থেকে বের হতে তাঁর মন চাইছিল না। বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ রংপুর বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি আজও অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কোনো একটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসা। তবে ওই তাপমাত্রা দু-তিন দিন স্থায়ী হতে হয়। একইভাবে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছীতে। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যমুনা নদীর চরাঞ্চলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন নাছিমা বেগম। তীব্র শীতে কাহিল গবাদিপশুও। একটু উষ্ণতা দিতে আগুন জ্বালিয়েছেন তিনি। কুঁড়িপাড়া চর, সারিয়াকান্দি, বগুড়া, ১৩ জানুয়ারি
ছবি: সোয়েল রানা

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের খুব কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল গতকাল দেশের কিছু অঞ্চলে। এর মধ্যে গতকাল রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নীলফামারীর ডিমলায় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি ও বরিশালে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গতকাল তাপমাত্রা নেমেছিল। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটছে। নৌপথে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উড়োজাহাজের চলাচলও। গতকাল নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়। এতে শতাধিক যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

ঘন কুয়াশার মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গতকাল ভোরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে একজন চালক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়াসহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে। এরপর আগামী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তখন আকাশে মেঘ থাকার পাশাপাশি বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে আবার দেশের কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।