ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটির এক পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

সন্ধ্যা সোয়া ৬টা। তখন পাশাপাশি দুই লাইনে দুটি ট্রেন আসছে। একটি ট্রেন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ রেললাইনে উঠে যায় একটি মাইক্রোবাস। তখনই এক পাশ থেকে একটি ট্রেন এসে মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যায় বহুদূর। তবে সৌভাগ্যবশত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

চট্টগ্রাম নগরের আমবাগান এলাকায় আজ শনিবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার আগেই মাইক্রোবাসচালক লাফ দিয়ে বের হয়ে যান। আর দুর্ঘটনাস্থলের পাশে রেলসেতুর সংস্কারকাজ চলার কারণে চলন্ত ট্রেনটির গতিও ছিল বেশ কম।  

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুই ব্যক্তি বলেছেন, ট্রেন যাওয়ার সময় লেভেল ক্রসিং প্রতিবন্ধক ফেলা হয়নি। এ জন্য মাইক্রোবাসচালক গাড়ি চালিয়ে যান। তবে রেলওয়ের গেটম্যান আকলিমা ও এক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, ট্রেন যাওয়ার সময় প্রতিবন্ধক ফেলা ছিল। কিন্তু কেউ একজন তা তুলে মাইক্রোবাসটি যাওয়ার সুযোগ করে দেন। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার শিকার মাইক্রোবাসটি একটি বায়িং হাউসের ভাড়া করা গাড়ি। ওই গাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়া করা হয়। তবে গাড়ির মূল চালক আজ দায়িত্বে ছিলেন না। তাঁর পরিবর্তে একজন বদলি গাড়িচালক ছিলেন বলে জানান বায়িং হাউসের এক কর্মকর্তা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, নগরের আমবাগান এলাকায় একই সময়ে দুটি ট্রেন পার হচ্ছিল। এক লেনে ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনমুখী শাটল ট্রেন এবং আরেকটি ছিল চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে নাজিরহাটগামী লোকাল ট্রেন। নাজিরহাটগামী ট্রেন প্রথমে চলে যায়। পরে শাটল ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসটি পাশের একটি সড়কে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের ভিড় জমেছে। ভিড় ছিল দুর্ঘটনাস্থলেও। ট্রেনের ধাক্কায় গাড়ির এক পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর গাড়ির কাচ ভেঙেছে। দুর্ঘটনাস্থলের পাশে রেলসেতুর সংস্কারকাজ চলছে। এ জন্য এই রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করছিল খুব কম গতিতে।

দুই প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি মো. বাবুল ও মো. ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, দুটি ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেন চলে যায়। এ সময় কোনো প্রতিবন্ধক ফেলা হয়নি। একটি ট্রেন চলে যাওয়ায় আর কোনো ট্রেন নেই মনে করে গাড়িচালক লাইনের ওপর উঠে যান। তখনই স্টেশনমুখী শাটল ট্রেন মাইক্রোবাসটিতে ধাক্কা দিয়ে কিছু দূর নিয়ে যায়।

মো. ওয়াসিম উদ্দিন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, লেভেল ক্রসিংয়ের দুই পাশেই প্রতিবন্ধক ফেলা হয়েছিল। একটি ট্রেন যাওয়ার পর আরেকটি ট্রেন লেভেল ক্রসিং পার হতে কিছুটা সময় নেয়। এতে দেরি দেখে কেউ একজন একটি প্রতিবন্ধক ওপরে তুলে দেন। এর মধ্যে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মাইক্রোবাসের চালক। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।

গেটম্যান আকলিমা দাবি করেছেন, তিনি দুটি প্রতিবন্ধক ফেলেছিলেন। এ ছাড়া ট্রেন যাওয়ার ঘণ্টাও বাজানো হচ্ছিল। আর পতাকা দিয়ে সংকেত দেখাচ্ছিলেন। এরপরও প্রতিবন্ধক তুলে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুর্ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, মাইক্রোবাসচালক সংকেত অমান্য করে ট্রেন যাওয়ার সময় রেললাইনে প্রবেশ করেছেন। এখন গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।