কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। রাষ্ট্র কর্তৃক আটক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক এ ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারিক তদন্ত দাবি করছে এবং দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
পৃথক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকের পর নির্যাতনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এমএসএফ এ ক্ষেত্রে মো. তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।
এদিকে গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে এ ধরনের গুম, খুন, নির্যাতন, আয়নাঘর, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জাতি দেখেছে। দেশবাসী আশা করেছিল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ওই পরিস্থিতির অবসান হয়ে একটা ন্যায় ও বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। অথচ যৌথ বাহিনীর হাতে এই বর্বর নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের হতবাক করল। বাসদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানুষের জানমাল, বিচার পাওয়ার অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাই বিনষ্ট হবে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।