ইতিহাসে তাজউদ্দীনকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়

তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২২ অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক, বৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ৩১ জুলাই
ছবি: দীপু মালাকার

অন্তর্মুখী মানুষ ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ইতিহাসের একটি কালপর্ব নিয়ে তাঁর নীরবতাও তাঁকে খুঁজে পেতে বাধাগ্রস্ত করে। সে কারণে ইতিহাসের অনেক জায়গায় তাঁকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।

স্মারক বক্তৃতায় বাংলার এই কর্মবীরকে এভাবে আধো আলো, আধো ছায়ায় তুলে ধরা হলো। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা।

তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সামাদের সভাপতিত্বে ‘সীমানা পেরোনো নীরব মানুষ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন তরুণ কথাসাহিত্যিক সুহান রিজওয়ান। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি এবং সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ও তাজউদ্দীনের মেজ মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন (রিমি) বিশেষ অতিথি ছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড কোনো বৃত্তি নয়, বরং মানুষের মনের বৃত্তটাকে বাড়ানোর উদ্যোগ। এই মানুষটি ও তাঁর আদর্শকে জানার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে।

স্মারক বক্তৃতায় সুহান রিজওয়ান বলেন, পাকিস্তান কায়েম হয়ে গেলেও এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া যে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে আলাদা, দেশপ্রেমিক কিছু তরুণের হাতে আওয়ামী লীগের জন্ম নিশ্চিত করেছে সেই সত্যকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে ফাইল হাতে ছুটে চলা তাজউদ্দীনকে তখন ধরা যায় একটি মুক্তিকামী ভূখণ্ডের প্রতীক হিসেবে।

সুহান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আজকের এই বাংলাদেশে কী দশা হতো তাজউদ্দীনের? হাইরাইজ বিল্ডিং ছাড়া যেখানে সবকিছু কেবলই নিম্নগামী, নানা রকম অনুভূতির কৃমি যেখানে অবিরাম উড়ে বেড়াচ্ছে জল, মাটি ও আকাশে; দুরারোগ্য ক্যানসার আক্রান্ত এ জনপদে তাজউদ্দীন কি আমাদের মতোই দর্শক হয়ে থাকতেন আজ?’
সিমিন হোসেন বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ নিজের মেধা, চেতনা ও আদর্শকে সমাজের কাজে ব্যয় করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে তাঁকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমাদের তাজউদ্দীনের মতো অনেক মানুষ প্রয়োজন, যারা নীরবে নিজের কাজটা করে যাবে।’
উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘দায়িত্বশীল কিছু কাজ করার জন্য আমরা অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছি। তাজউদ্দীন আহমদের ভেতরে সেই বিষয়টা ছিল। তাঁর জীবনের মূল্যবোধ তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার, যাতে পেশাগত জীবনে তারা সেই মূল্যবোধের চর্চা করে।’

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দীন আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মো. সামাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে আমরা খুব কম তথ্যই পেয়েছি। তিনি দেশকে ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কাজ করে গেছেন। আজ যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এর পেছনে তাঁর অবদানকে স্মরণ করতে হবে।’

২০১১ সালে তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। এ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক, দ্বিতীয় বর্ষের একজন ছাত্রীকে প্রতি মাসে নগদ অর্থ ‘তাজউদ্দীন আহমদ বৃত্তি’ দেওয়া হয়। প্রতিবছর আয়োজন করা হয় তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতা। মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর থেকে আবারও স্মারক বক্তৃতা শুরু হলো। এ বছর স্বর্ণপদক পেলেন ত্রপা সরকার এবং বৃত্তি পেয়েছেন সানজিদা জামান। এ ছাড়া রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাঁচ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়।