ফিলিস্তিনের মানুষের মুক্তির লড়াই আমাদেরও: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সমাবেশে বক্তব্য দেন ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ঢাকা, ২০ মার্চছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষের মুক্তির লড়াই আমাদেরও। এ লড়াই পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ থামানো না গেলে এ ধরনের আগ্রাসন এবং হামলা অব্যাহত থাকবে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে এ বিক্ষোভে আয়োজন করা হয়। ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশের আয়োজনে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে আছি, পক্ষে থাকব। এ পক্ষে থাকার অর্থ হচ্ছে, যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বা যে ব্যবস্থা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমাদের এ সংগ্রাম। আমরা এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বলেন, ‘আগে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে হামলা করলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবাদ হতো, এখন হয় না। এর কারণ, মধ্যপ্রাচ্যও এখন পুঁজিবাদের অংশ হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এ লড়াই পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন আছে, এটা স্পষ্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে আজ এই নৃশংস ঘটনা ঘটছে।’

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তার কারণে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতা নিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে ইসরায়েল। আজকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক হাত যদি হয় ইসরায়েল, তাহলে তার আরেক হাত সৌদি আরব। জাতিসংঘ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা কর্তৃত্ব করছিল এবং এখনো করছে।

আনু মুহাম্মদের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যের বিষয়টিও। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যের কারণে জমিতে, ভূমিতে, আমাদের রাজনীতিতে বিভিন্ন জটিলতায় পড়েছি। অনেকে মনে করেন, জনগণের অধিকার হরণে যে হস্তক্ষেপ করেছে ভারত, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্ত করবে। ভারতের আধিপত্য থেকে আমাদের মুক্ত করার কোনো দায় যুক্তরাষ্ট্রের নেই, তার দায় ভারতের সঙ্গে সংহতি রেখে নিজের স্বার্থ এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা।’

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২০ মার্চ
ছবি: প্রথম আলো

অধ্যাপক হারুনুর রশিদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী প্রমুখ।

গাজায় ইসরায়েলের হামলা মানবতাবিরোধী অপরাধ

এদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর আবারও বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল সরকার। নেতানিয়াহুর ক্ষমতা পোক্ত করতে সাম্প্রতিক এই হামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে শিশু ও নারীরাও রয়েছে।

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও একতরফাভাবে ফিলিস্তিনের ওপর অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহে বাধা দিয়ে যাচ্ছে। এই নৃশংসতা সুস্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ।

বিবৃতিতে ইসরায়েলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং দোষীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

গণহত্যার প্রতিবাদ উদীচীর

গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আজ এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় নতুন করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের অমানবিকতা ও নৃশংসতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এর নিন্দা জানিয়ে তাঁরা অবিলম্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দাবি করেন।

স্বাধীনতাকামী মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রাম এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া অন্যতম কর্তব্য। সে জন্য ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখল ও গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধের দাবি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শান্তিকামী রাষ্ট্রকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে উদীচী।

গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় শিশুসহ ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম আজ এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছেন।