শিশু হাসপাতালে রোগীর বাড়তি চাপ, ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে

ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে শিশু আদনানকে বরিশাল মেডিকেল থেকে আনা হয় ঢাকার শিশু হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করতে না পেরে আদনানকে অন্য হাসপাতলে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনেরাছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দুই মাসের নবজাতক আদনানকে নিয়ে শুক্রবার সকাল সোয়া আটটার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আসেন মো. রাকিব। তাঁর ভাইয়ের ছেলে আদনান। এই নবজাতকের সমস্যা ঠান্ডাজনিত। আদনানের অবস্থা গুরুতর হলে বৃহস্পতিবার রাত চারটায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনেরা। কিন্তু শিশু হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় তাঁদের ফিরে যেতে হয়। সকাল ৯টায় ছোটেন রাজধানীর অন্য হাসপাতালের উদ্দেশে।

বেলা দুইটার দিকে আবার শিশু আদনানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, রাজধানীর গ্রিন রোডের নিউ লাইফ হাসপাতালে আছেন। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে আদনানকে। চিকিৎসক এই নবজাতকের ঠান্ডাজনিত সমস্যার কথা জানিয়েছেন।

আদনানের চাচা মো. রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন যেখানে আছি, এখানেও অনেক ঠান্ডার রোগী। বেশির ভাগ মানুষ ঠান্ডার সমস্যা নিয়ে আসছেন। আমরা অনেক দূর থেকে আসছিলাম। কিন্তু শিশু হাসপাতালে চাপ বেশি থাকায় তারা ভর্তি রাখেনি।’

দেশে শীত বাড়তে থাকায় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এই রোগে সবচেয়ে ভুক্তভোগী শিশুরা। তারই প্রভাব পড়ছে শিশু হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি। তাই জায়গা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এবং সাধারণ ঠান্ডা-কাশির রোগীর চাপ বেশি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নভেম্বরের শুরু থেকে হাসপাতালটিতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৩১০ জন রোগী ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা নিয়েছেন। গত অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ১৮০ থেকে ২০০ জনের মধ্যে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার সুমাইয়া লিজা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমরা বেডের বাইরে কাউকে চিকিৎসা দিই না। তাই অনেক রোগীকে ফেরত যেতে হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

‘বেশির ভাগ রোগীই আসছে গ্রাম থেকে’

শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগী গ্রাম থেকে আসছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্রামের পরিবারগুলো শিশুর যত্নে কম সচেতন থাকে। ফলে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সকালে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাওয়া নবজাতক আদনানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়।

আরেক শিশু রাইসাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন বাবা মো. রাসেল। তাদের গ্রামের বাড়ি সাভারে। রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে তাঁর মেয়ে অসুস্থ। সাভারে চিকিৎসক দেখিয়েও তাঁর শরীরের উন্নতি হয়নি। তাই তিনি মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছেন।

কেরানীগঞ্জ থেকে ছেলে মোস্তফাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন রুনা আক্তার। হাসপাতালের নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। রুনা আক্তার জানান, ১৬ নভেম্বর থেকে তাঁর ছেলে মোস্তফা এখানে ভর্তি রয়েছে।

নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের নার্স লিপি বৈরাগী বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি। শীত মৌসুমের কারণে এই বাড়তি চাপ। তবে বেশির ভাগ রোগী গ্রামের দিকের। হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ শিশুর পরিবার অসচেতন। ফলে অল্পতেই শিশুর অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।’

করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসক সুমাইয়া লিজা বলেন, শিশুদের যখন ঠান্ডা লাগে, নাক বেশি পরিষ্কার রাখতে হয়। শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে বা অবস্থা গুরুতর মনে হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ঝুঁকি কম থাকবে।