পাহাড় কাটা বন্ধে আদালতের নির্দেশনা পালন করেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পাহাড় কাটা বন্ধে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধিদল
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পাহাড় কাটা বন্ধে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রতিপালন করেনি।

রোববার চট্টগ্রামে পাহাড় কাটাবিষয়ক এক আলোচনা সভায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা বলেন। নগরের একটি রেস্তোরাঁয় বেলা, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও ফোরাম ফর প্ল্যান্ড চট্টগ্রাম এই সভার আয়োজন করে।

সভায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০১১ সালে আদালত এক রায়ে চট্টগ্রাম নগরের সব পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পাহাড়ি বন উজাড় বন্ধ, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু করপোরেশন ও সিডিএ সেই দায়িত্ব একেবারেই পালন করেনি। ফলে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। সিডিএ নিজেই পাহাড় কেটে সড়ক করেছে।

বেলার প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, আদালতের ২০২৩–এর অপর এক আদেশে বিদ্যমান পাহাড়গুলোর তালিকা প্রস্তুত করে পাহাড়গুলোকে ধ্বংস ও কাটা থেকে রক্ষা করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে ইতিমধ্যে কেটে ফেলা পাহাড়গুলোতে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেন। সে কাজটিও হয়নি।

সভাপতির বক্তব্যে ফোরাম ফর প্ল্যান্ড চট্টগ্রামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারির কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে হয়নি। যে কারণে পাহাড় কাটা এখনো বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

পাহাড় কাটা বন্ধ করতে নদী কমিশনের আদলে একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খালেদ মিসবাহুজ্জামান। তিনি বলেন, চার দশক আগে চট্টগ্রামে ২০০ পাহাড় ছিল। এখন অনেক পাহাড় কাটা পড়েছে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী, স্থপতি সুভাষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহীন চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওমর ফারুক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান আহমেদ।

সভা শেষে মুহাম্মদ সিকান্দর খান ও রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে একটি দল সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় পাহাড় কাটা রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন মেয়র।

মেয়রের আশ্বাসের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র ঈদের পর একটি সভা আহ্বান করবেন বলে আমাদের বলেছেন। এতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা শেষে পাহাড় রক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’