দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের মধ্যে দক্ষতার অভাব রয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) শিক্ষকদের মধ্যেও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারের জন্য যুবদের প্রস্তুত করতে কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। এ জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আজ মঙ্গলবার ‘বৈশ্বিক বাজারের জন্য যুবদের প্রস্তুত করতে চাই কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, টিভিইটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ-সুবিধাসহ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে আরও গ্রহণযোগ্য করতে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, নানা দিক থেকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এগিয়েছে। যুবদের অনেকের দক্ষতা আছে, কিন্তু স্বীকৃতি নেই। শিক্ষকদের মধ্যেও দক্ষ জনবল তৈরির জন্য যোগ্যতার অভাব রয়েছে। ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে বাধা কমাতে হবে। টিভিইটিয়ের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাবেরও পরিবর্তন আনতে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিভিইটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস্তানুল কবির। এতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পরও যুবদের মধ্যে দক্ষতার অভাব দেখা যাচ্ছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় নেই যথাযথ বিনিয়োগ। বিশ্বব্যাংকের ২০২০-২১ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ১।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেকার। এই জনগোষ্ঠীর ২৭ দশমিক ১ শতাংশ পড়াশোনা করেননি এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ ( প্রায় ১১৪ কোটি) নারী। এই বিশাল শূন্যতা বিশ্ববাজারে দেশের যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের প্রবেশে বাধা তৈরি করছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান বলেন, ‘পরিচিতির অভাবে দেশের যুবরা বিদেশে দক্ষ কর্মী হিসেবে চাকরি পায় না। আমরা চাকরি বাছাই করে প্রশিক্ষণ দিই। কিন্তু যুবরা সেই কাজ করতে পারবে কি না, সেটা যাচাই করি না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে পড়ছে।’
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, ‘আমাদের নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও তাদের প্রবেশগম্যতা তৈরি করতে হবে।’ নারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতের ওপরও জোর দেন তিনি।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০-এ কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ যুবককে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।
কর্মশালায় অতিথিরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সুবিধা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) ভোগ করতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে হবে। এ জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশেষ করে যুব নারীদের বিশ্ব বাজারের জন্য দক্ষ করে গড়ে তুলতে টিভিইটিকে আরও পরিচিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লার্নিং ডিরেক্টর জলি নূর হক, টিভিইটি প্রফেশনাল নেটওয়ার্কের (টিপিএন) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিনা চৌধুরী প্রমুখ।