মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৮ সাংবাদিক
অভিবাসন খাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতি হিসেবে মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১৮ জন সাংবাদিক। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। জাতীয় দৈনিক বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক সমকালের রাজীব আহমদ, দ্বিতীয় হয়েছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের রাসেল আহমেদ এবং যৌথভাবে তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম আলোর মো. মহিউদ্দিন ও দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কানিজ ফাতেমা।
২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। এ বছর মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের এক দশক পূর্তি উদ্যাপিত হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা-২ প্রকল্প এবারের পুরস্কার প্রদান করেছে।
আঞ্চলিক পত্রিকা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলার পত্রিকার তরিকুল ইসলাম মোহাম্মদ হাসান, দ্বিতীয় হন দৈনিক গ্রামীণ দর্পণের মোহাম্মদ শরীফ ইকবাল এবং তৃতীয় হন দৈনিক সুবর্ণগ্রামের আয়শা সিদ্দিকা। অনলাইন বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কামরান সিদ্দিকী, জসিম উদ্দিন ও সালেহ শফিক, দ্বিতীয় হন জাগোনিউজ ২৪-এর রায়হান আহমদ এবং তৃতীয় হন বাংলাভিশনের মো. আবদুল্লাহ।
টেলিভিশন সংবাদ বিভাগে প্রথম হয়েছেন চ্যানেল ২৪-এর সম্রাট হোসেন, দ্বিতীয় নিউজ ২৪-এর মাসুদা খাতুন এবং তৃতীয় এখন টিভির সাজিদ আরাফাত। অনুসন্ধানী টেলিভিশন প্রোগ্রাম বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ‘তালাশ’। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নাজমুল সাঈদ ও রাকিবুল হাসান এ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। রেডিও বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন রেডিও তেহরানের ঢাকার প্রধান বাদশা মিয়া। বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও পুরস্কারের অর্থের চেক তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদন তৈরি করতে দুজন সাংবাদিককে বিদেশে পাঠাবে ব্র্যাক
অনুষ্ঠানে মাইকেল মিলার বলেন, অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের আওতায় বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মী নেবে ইউরোপ। এর পাশাপাশি বিদেশফেরত ব্যক্তিদের পুনরেকত্রীকরণ গুরুত্বপূর্ণ। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যায়, তাদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, বিদেশে যেখানেই যান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাকিত্ব ও তাঁদের নানা সংকটের কথা শোনা যায়। এই মানুষগুলোর পাশে থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেসব দেশে থাকেন, সেখান থেকেও প্রতিবেদন করা দরকার। সেখান থেকে প্রতিবেদন তৈরি করতে দুজন সাংবাদিককে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে ব্র্যাক। শিগগিরই ব্র্যাক এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রধান ম্যাক্স ট্যানন বলেন, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন খরচ অনেক বেশি। এ সমস্যার সমাধান জরুরি। কেন একজন মানুষকে বিদেশ যেতে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হবে—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্য বা যেসব দেশে যাচ্ছেন; সেখান থেকেও প্রতিবেদন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মাইগ্রেশন ও মিডিয়া নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, অভিবাসনের সঙ্গে এখন কৃষি, অর্থনীতি, প্রবাসী আয়সহ অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। সেসব নিয়ে বৈচিত্র্যময় প্রতিবেদন হতে পারে।
এতে আরও বক্তব্য দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের রেইজ প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব এ টি এম মাহবুব-উল করিম। অনুষ্ঠানে মতবিনিময় অংশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকার ইতালি দূতাবাসের উপপ্রধান ফেডেরিক জেমপারেলি, আইএলওর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাহনুমা সালাম খান, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শীপা হাফিজা, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভিবাসন খাতের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন তিনি।