রেলের রানিং স্টাফদের ‘মাইলেজ-সুবিধা’ বেড়েছে

ট্রেনপ্রতীকী ছবি

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ‘মাইলেজ-সুবিধা’ বাড়ানোর সংশোধনী দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে রানিং স্টাফদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন।

আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে রেলপথ সচিবের কাছে একটি সংশোধনী চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, রানিং স্টাফরা রেলওয়ে কোড অনুসারে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ভাতা প্রাপ্য হবেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘২০২২ সালের ২১ আগস্ট ৯১ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রের (ক) অনুচ্ছেদটি এবং অর্থ বিভাগের গত ২৩ জানুয়ারি ২৭ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রটির রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্যতার বিষয়টি সংশোধন করা হলো।’

সংশোধনীটি হচ্ছে, ‘রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ের এস্টাবলিশমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা প্রাপ্য হবেন না।’

বর্তমান সংশোধনীতে দাবি পূরণ হয়েছে কি না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দাবির কিছুটা পূরণ হয়েছে। আনলিমিটেড মাইলেজ–সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু ৭৫ শতাংশ আনুতোষিক সুবিধাটা দেওয়া হয়নি।’

দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসাবে বাড়তি অর্থ পেতেন রানিং স্টাফরা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ মনে করা হয়। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চললে তাতে দায়িত্বপালনরত রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। আট ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ।

কর্মচারীদের অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ মাইলেজ যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধানও ব্রিটিশ আমল থেকে চালু ছিল। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

২০২২ সালের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন, যার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১১ জুন তৎকালীন রেলওয়ের মহাপরিচালক রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই বছরের ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানায়।

সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় ১০ দিন সময় চাইলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়ন। এর মধ্যেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন রানিং স্টাফরা। এতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরে আলোচনার মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন রানিং স্টাফরা। সকাল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।

রেলের রানিং স্টাফরা হলেন ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত পরিচালক (গার্ড), ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা ট্রেন চালানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্বপালন করে থাকেন। ট্রেনচালক ও সহকারী চালকের সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। পরিচালক ও টিটিই মিলিয়ে রানিং স্টাফের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৯০০–এর মতো।