রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গঠনমূলক প্রস্তাব দেওয়া: ফরহাদ মজহার
অন্তর্বর্তী সরকারকে আস্থায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে টিকিয়ে রাখা সবার নৈতিক দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর দলগুলোর উচিত হবে আগামী দিনে কী করে দেশ গঠন করা হবে, সে বিষয়ে গঠনমূলক প্রস্তাব দেওয়া।
‘নতুন বাংলাদেশ: বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রফেসর কে আলী ফাউন্ডেশন এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ফরহাদ মজহার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়? তারা চায় আবার ক্ষমতায় যাবে, ১৫ বছর লুটপাট করবে। এটা তো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তারা দেশ গঠনের প্রস্তাব দিক।
সবাই মিলে দেশ গঠন করতে হবে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, বিভিন্ন মতের মানুষ রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হয়ে একটা রাষ্ট্রে বাস করবে। এখানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ থাকতে পারে, ইসলামের লোক থাকতে পারে, পীর-আউলিয়ারা থাকতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে টিকিয়ে রাখা সবার নৈতিক দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমালোচনাও এই সরকারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে। আমরা তো হঠাৎ করে এত কড়া কথা বলিনি, আমরা বলছি, যেহেতু সামনে বিপদ–আপদ দেখতে পাচ্ছি।’
আমলাদের বিদ্রোহ চলছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, তাঁদের যে আচরণ দেখা যাচ্ছে, তা ইতিবাচক নয়। জনপ্রশাসন এত গুরুত্বপূর্ণ হবে কেন, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এই যে জনপ্রশাসনকে দিয়ে একটা দলের স্বার্থ রক্ষা করবেন, এটা তো হতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই সংস্কার কখনো ওপর থেকে করে দিতে পারবেন না।’ এখন পর্যন্ত যোগদান না করা পুলিশ সদস্যদের পলাতক ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
দেশের বিদ্যমান সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘কারণ এই সংবিধান তো জনগণ তৈরি করে নাই।’ ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এত রক্ত দিলাম, তারপর আমরা কী পেলাম? আমরা শেখ হাসিনার সংবিধানই পেলাম। এই সংবিধান থাকবার কথা ছিল না।’
সংবিধান বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আদেশ দিয়ে দেশ চালানোর পরামর্শ দেন ফরহাদ মজহার। সেমিনারে তিনি বলেন, যাঁদের উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে, তাঁরা রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা। এই রাষ্ট্রপতিকে শেখ হাসিনা নিয়োগ করেছে। তাঁর (রাষ্ট্রপতি) কাছে শপথ নিয়ে এই উপদেষ্টারা বলেছেন যে ‘আমরা সংবিধান সংরক্ষণ করব।’ এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছে বলে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, আইনের কথা বলে, সংবিধানের কথা বলে একটা প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জনগণ যে অভিপ্রায় প্রকাশ করেছিল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, তা নস্যাৎ করে দিয়েছে।
এই নস্যাৎ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এর তো কোনো রাজনৈতিক যুক্তি নেই। একটা কারণ থাকতে পারে যে আপনারা আবার শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে চান। শেখ হাসিনা বলছেন, “তিনি চট করে ঢুকে যাবেন।” কার ওপর ভিত্তি করে তিনি চট করে ঢুকে যাবেন? এই সংবিধানকে ফেলে দেন, তাঁর চট করে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেন জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যে ভুলটা হয়েছে, তা অবশ্যই শোধরানো দরকার।’
দেশে দুটি নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, একটি গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে, যাতে নতুন রাষ্ট্র গঠন করা যায়। আরেকটা নির্বাচন লাগবে সরকার গঠনের জন্য। রাষ্ট্র গঠনের নির্বাচন আগে, তারপর সরকার গঠনের নির্বাচন। এটা না মানলে ভয়ানক বিপদে পড়তে হবে।
রাষ্ট্র গঠনে জনগণকে অংশগ্রহণ করাতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, নতুন রাষ্ট্র গঠনের সহজ প্রক্রিয়া আছে। গ্রাম থেকে ছোট ছোট সভা করবেন। জনগণ বলবে, সে কী চায়। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে তা করা সম্ভব নয়।
কক্সবাজারে নারী পেটানোর ঘটনার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনি যতই মাজার ভাঙেন, ...বুঝতে পারি যে আপনি শেখ হাসিনার দালাল। আপনি এখানে বিশৃঙ্খলা করতে চান। এর পাশাপাশি ইসলামের ক্ষতি করেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আছে, তা বিশ্বাস করেন না ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থাকবে, যদি তিনি সরাসরি স্বার্থ রক্ষা করেন।’
এই সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে বটে, কিন্তু তাদের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট, নেটওয়ার্ক ও দুর্নীতির আস্তানা নির্মূল হয়নি। র্যাব যে কর্মকাণ্ড গত ১৫ বছরে চালিয়েছে, তার জন্য সংস্থাটির বিলুপ্তিও চান নুরুল ইসলাম।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শেখ আকরাম আলী। বাংলাদেশ সংবাদপত্র ফাউন্ডেশনের মহাসচিব সাঈদুল হোসেনের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য আবুল হাসান মো. সাদেক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শেখ নজরুল ইসলাম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আহমেদ ফেরদৌস, সাবেক আমলা আবুল হোসেন প্রমুখ।