সংখ্যালঘুদের ‘দেশত্যাগের’ কারণ অনুসন্ধানে কমিশন গঠনের আহ্বান রানা দাশ গুপ্তর

রানা দাশ গুপ্ত
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেছেন, ‘আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, কেন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, সে জন্য অনতিবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করা হোক। নিরূপণ করা হোক কারা, কেন দেশত্যাগ করছে অথবা দেশে থাকতে পারছে না।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা জজকোর্টে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান মিলনায়তনে বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে রানা দাশ গুপ্ত এসব কথা বলেন।

রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ অনেক দূরে ছিটকে গেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান আজ আর নেই। এই সংবিধানের রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি বিসর্জিত হয়েছে। আজও বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মীয় আবরণ থেকে মুক্তি পায়নি। রাষ্ট্রধর্ম আজও বলবৎ। এই রাষ্ট্রধর্ম বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাস্তব সংখ্যালঘুতে রূপান্তরিত করেছে।’

প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, রাজনীতিবিদেরা তাঁদের বলেন, তাঁরা নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবছেন কেন। তাঁরা পরিষ্কার করে বলতে চান, সংখ্যালঘু হিসেবে থাকার জন্য তাঁরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার জন্য তাঁরা একাত্তরে আত্মত্যাগ করেননি।

ক্রমান্বয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ‘কমে যাওয়ার’ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য প্রকাশ করেছে। আমরা লক্ষ করেছি, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় তৎকালীন পূর্ববঙ্গে সমগ্র জনগোষ্ঠীর ২৯.৭ ভাগ ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় এ সংখ্যা নেমে আসে ১৯ থেকে ২০ ভাগে। অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রথম ২৫ বছরে ৯.৭ ভাগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এ দেশ থেকে হারিয়ে গেছে।’

রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘(সংখ্যালঘুরা) কেন হারিয়ে গেছে, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। গত ৫০ বছরে ১১ শতাংশ লোক যে হারিয়ে গেল, এরা কারা? এ দেশে গণতন্ত্র ও সমাজ প্রগতির পক্ষে নির্ভীক সৈনিক হিসেবে আন্দোলন করেছিল; স্বাধীন বাংলাদেশেও এরা গণতন্ত্র এবং সমাজ প্রগতির পক্ষে কাজ করছে। কেন এই সংখ্যালঘুরা দেশ ত্যাগ করছে? আজ পর্যন্ত কোনো সরকার এর কারণ নির্ণয় করতে পারেনি।’

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বার শাখা সভাপতি সুনীল রঞ্জন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার বসু, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি প্রাণনাথ প্রমুখ।