রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় বেশ সময় নিয়ে একটি জ্যাকেট দেখছিলেন হায়দার আলী। দোকানদারের সঙ্গে দামে বনিবনা না হলেও সেটি গায়ে চাপিয়ে নিলেন। এবার দর-কষাকষির একপর্যায়ে দোকানদারের উদ্দেশে বললেন, ‘দিলে দিবা, না দিলে না দিবা। আমি দেড় শই দিব।’ দোকানদারের মন গলে গেল। দেড় শতেই বিক্রি করা হলো জ্যাকেটটি।
হায়দার আলীর বাড়ি নাটোরের আবদুলপুরে। তবে তিনি রাজশাহী শহরে রিকশা চালান। প্রতিদিন সকালে ট্রেনে করে শহরে আসেন। কাজ শেষে গভীর রাতেই আবার ট্রেনে করে বাড়ি ফিরে যান। হায়দার আলী আজ সকালে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্টের জীবন। গায়ে একটি জ্যাকেট আছে। কিন্তু ওইটায় শীত যায় না। রাত হইলে শীতে আরও ঘিরে ধরে। তাই জ্যাকেটটি নিলাম।’
গত দুই দিনে রাজশাহীর তাপমাত্রা কমছেই। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দিনের বেলায় রোদ উঠলেও কনকনে ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। শ্রমজীবী মানুষদের কষ্ট আরও বেড়েছে। আজ সকাল ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে সকাল ৯টায় সেই তাপমাত্রা আরও কমে নেমেছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আনোয়ারা খাতুন বলেন, এমন তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। আরও কমার সম্ভাবনাও আছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গত মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ছিল ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
এদিকে শীতের কারণে জনজীবনে কিছুটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। কর্মচঞ্চলতাও কিছুটা কমেছে। সন্ধ্যা হলেই নগরের মানুষ বাসায় চলে যাচ্ছেন। মানুষের সকালটাও দেরিতে শুরু হচ্ছে। পোশাক-আশাকেও এসেছে পরিবর্তন। সবাই গরম কাপড় পরছেন। শীত বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানেও ভিড় চোখে পড়ার মতো।
শীত বাড়লেই নগরের কুমারপাড়া থেকে সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ফুটপাতে হলিডে মার্কেটে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। ফুটপাতের দুই ধারে বসা এই মার্কেটে ২০ থেকে ৫০০ টাকায় গরম কাপড় বিক্রি হয়। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে। নিম্নআয়ের মানুষেরা সেখানে বেশি ভিড় করেন বলে অনেকেই ‘গরিবের মার্কেট’ বলে থাকেন।
ফুটপাতের দক্ষিণ পাশে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কোট বিক্রি করছিলেন নজরুল ইসলাম। বললেন, এই কোট দোকানে-শোরুমে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু তিনি বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সেখান থেকে একটি কোট কিনলেন আফজাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ফুটপাতে একটি খাবারের দোকান চালান। বললেন, ‘ভেতরে অন্য কাপড় পরে বাইরে কোট পরলে শীত কম লাগবে। একটু ধুয়ে ইস্তিরি করে পরলে একেবারে নতুন হয়ে যাবে। তখন কেউ বলবে না যে এটা ৪০০ টাকার।’
শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে হলিডে মার্কেটে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন দুই নারী। সঙ্গে নিয়েছেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের। এক নারী বলেন, শহরে তো শীত একটু কম। গ্রামে টেকা যায় না। শহরে ফুটপাতে কম দামে শীতের কাপড় বিক্রি হয় বলে এসেছেন। এখন দেখছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ভালো কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহীর এই হলিডে মার্কেটে প্রতি শুক্রবারে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিক্রি হয়। কয়েক শ ব্যবসায়ী সেখানে শীতের বাহারি পোশাক নিয়ে বসেন। আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, শুক্রবারে নগরের প্রায় সব দোকান বন্ধ থাকে। বড় বড় বিপণিবিতানের দোকানের কর্মচারীরা সপ্তাহে ছুটির দিনে এই এক দিন ব্যবসা করেন। সব শ্রেণির মানুষ কাপড় কিনতে সেখানে যান।