সাংবাদিক সমিতির ইফতারে সব দল-মতের শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ইফতার ও আলোচনা সভাছবি: সংগৃহীত৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ইফতারে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দল ও মতের শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় এ ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইফতারের আগে ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। আরও অংশ নেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমানসহ পদস্থ শিক্ষকেরা।

ছাত্রনেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, সদস্যসচিব নাহিদ ইসলাম, অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ প্রমুখ ইফতার ও আলোচনা সভায় অংশ নেন।

ছাত্রনেতারা যা বললেন

আলোচনায় অংশ নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ এবং শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্ররাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব।’ এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকট, গ্রন্থাগার সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত মহাপরিকল্পনা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদলকে আজ ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে। এটি আধুনিক যুগের ছাত্ররাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা চাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন যেন অতিসত্বর দেওয়া হয়। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের সভা করা প্রয়োজন। ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে।’

‘শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন জরুরি’

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও প্রশাসনের সবাইকে অনুরোধ জানাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে যেন আরও উন্নত করা হয় এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে যেন নতুন করে ভাবা হয়।’

সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা ডাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করি না।’ সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘এখানে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক বক্তব্য শুনলাম। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করে। সুন্দর পরিবেশ পেলে আমরা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি। তবে এই দায়িত্ব প্রশাসন বা কোনো ছাত্রসংগঠনের একার নয়। এতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে হবে।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডুজার সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ।