দেশে ১৫ লাখ পরিবারে হেপাটাইটিস, রয়েছে এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার ঘাটতি
দেশে কমপক্ষে ১৫ লাখ পরিবারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের উপস্থিতি আছে। হেপাটাইটিসের কারণে বছরে আনুমানিক ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এ রোগের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিভাগ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও নার্সরা অংশগ্রহণ করেন।
এ বছর বিশ্ব হেপাটিইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘হেপাটাইটিস: বাধা ভেঙে ফেলি’। দিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্ব দিয়ে পালন করেছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে র্যালি (শোভাযাত্রা) হয়েছে। এরপর হেপাটাইটিস নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনার হয়েছে। আলাচনা ও সেমিনারের মাঝে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে পোস্টার প্রদর্শনী হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারের প্রধান অতিথি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শাহিনুল আলম বলেন, রোগীর স্বার্থে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে, ব্যবসায়িক স্বার্থে নয়। হেপাটাইটিস নিয়ে সমাজে যে কুসংস্কার ও বৈষম্য আছে, তা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ দেশে প্রচুর রোগী, তাই গবেষণার সুযোগও বেশি। এই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, হেপাটাইটিস মানে যকৃতের প্রদাহ। পাঁচটি ভাইরাসের কারণে যকৃতের প্রদাহ হয়। ভাইরাসগুলো এ, বি, সি, ডি এবং ই নামে পরিচিত। এর মধ্যে বি এবং সি ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ঘটায়। বিশ্বব্যাপী ৮০ শতাংশ যকৃতের ক্যানসারের কারণ মূলত বি এবং সি ভাইরাস।
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ বি এম ছফিউল্লাহ বলেন, হেপাটাইটিসের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি আছে। ঘরের বাইরের অনিরাপদ খাবারের মাধ্যমে এ এবং ই ভাইরাস ছড়ায়। এটা অনেকে জানেন না। মানুষের মধ্যে পোলিও রোগের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে দেশ পোলিওমুক্ত হতে পেরেছে।
হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, সার্জনদের সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। সার্জারির আগে রোগীর হেপাটাইটিস আছে কি না, সেই পরীক্ষা হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি রোগীর হেপাটাইটিস থাকলে অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসকেরও প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, হেপাটাইটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন জরুরি। বিশুদ্ধ খাবার খেতে হবে, খাওয়ার আগে হাত ধুতে হবে। কেউ যদি প্রয়োজনে রক্ত গ্রহণ করেন, তবে নিশ্চিত হতে হবে যে ওই রক্ত নিরাপদ। গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস পরীক্ষা জরুরি। কারণ, মা আক্রান্ত থাকলে সন্তানের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, হেপাটাইটিস বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। হাসপাতালে নিরাপদ রক্তসঞ্চালন নিশ্চিতের দাবি করেন কেউ কেউ। একজন বলেন, ডায়ালাইসিস যন্ত্র সংক্রমণের কারণ হতে পারে, এটাও মনে রাখা দরকার।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশে কমপক্ষে ১৫ লাখ পরিবারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের উপস্থিতি আছে। সুতরাং পরিবার থেকেই প্রতিরোধ শুরু করতে হবে।