চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যায় আসামি ৩১, ছাত্রলীগ–যুবলীগ–আ. লীগের ইন্ধনের অভিযোগ
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ইন্ধনে আসামিরা সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন বাদী। মামলার বাদী নিহত সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—চন্দন দাস, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, রনব, বিকাশ, রমিত, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, লালা, সোহেল দাশ, শিবকুমার, গণেশ, রাজ কাপুর, পপি, দেব, অজয় প্রমুখ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন নিহত আইনজীবীর বাবা। মামলার আসামিদের বেশির ভাগ নগরের কোতোয়ালি এলাকার সেবক কলোনির পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে পুলিশ এর মধ্যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
চন্দন দাসকে মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারেক আজিজ। হত্যাকাণ্ডের সময় চন্দন কমলা রঙের গেঞ্জি ও হেলমেট পরেছিলেন বলছে পুলিশ। ভিডিওতে তাঁকে কোপাতে দেখা গেছে ও তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানায় পুলিশ।
এ ছাড়া আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে সাইফুল ইসলামের ভাই আরও একটি মামলা করেছেন বলে জানান তারেক আজিজ।
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। তাঁরা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এ সময় আইনজীবীদের গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন কিছু আইনজীবী। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মিছিল শেষে ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাইফুল। তখন তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ছিলেন ২৫-৩০ জন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন রয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।
সাইফুল ইসলামের মরদেহ দাফন ও অন্যান্য কাজে গ্রামের বাড়িতে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরি হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে গত বুধবার কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ৭৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৮ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই কোতোয়ালি এলাকার বান্ডিল সেবক কলোনির বাসিন্দা।