তিন বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে আলাউদ্দিন নামের এক নিরীহ দিনমজুর নিহতের মামলার কিনারা এখনো হয়নি। শনাক্ত হয়নি অস্ত্রধারীরা। উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রও। ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে কী আছে, সেই অপেক্ষায় তিন বছর কেটে গেছে পুলিশের। কিন্তু ফুটেজ মুছে ফেলায় তদন্তের কূলকিনারা করতে পারছে না থানা-পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
কাল শনিবার এই হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান ইউসেফ টেকনিক্যাল স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় গুলিতে মারা যান দিনমজুর আলাউদ্দিন। তিনি কারও অনুসারী ছিলেন না। ভোটকেন্দ্র-সংলগ্ন রেললাইনের সঙ্গে লাগোয়া বস্তিতে থাকতেন তিনি। সকালে নাশতা খেয়ে কাজে যাওয়ার পথে গুলিতে মারা যান। এ ঘটনায় তাঁর বড় বোন জাহানারা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করে রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তারা তদন্তে কোনো কিনারা করতে না পারায় সাত মাস পর সিআইডি তদন্ত শুরু করে। সূত্র জানায়, সিআইডি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সিসিটিভি ক্যামেরার পাঁচ শ জিবি হার্ডডিস্ক। সেটি থেকে ঘটনার দিনের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফুটেজ মুছে ফেলা হয়।
আদালতের নির্দেশে সেই মুছে যাওয়া ফুটেজে কী আছে, তা পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে ফলাফল আসে শূন্য। ফুটেজটি নগরের খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন ওরফে হিরণের বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশে তাঁর বাসা। তিনি বিদায়ী কাউন্সিলর ছিলেন। দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় সেবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমান তাঁর প্রার্থী বলে প্রচার রয়েছে।
জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের দিন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন না। তাঁর কোনো প্রার্থী ছিল না। ওয়াসিমও তাঁর ছোট ভাইয়ের মতো। ঘটনার দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে কিছু নেই কেন, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে বলতে পারি। ঘটনাস্থলের আশপাশে প্রায় সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আমি নিজেও চাই খুনি শনাক্ত হোক। বিচার হোক।’
এদিকে মামলার ৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন মো. আক্তার, বিল্লাল, সাজু, ইমন ও হেলাল। পলাতক রয়েছেন যুবলীগের কর্মী মো. নাছির, সাইদুল ইসলাম, জজ মিয়া, মো. নাসির। তারা সবাই ওয়াসিমের অনুসারী।
মামলার প্রধান আসামি নাছির নিজের অনুসারী নয় দাবি করে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ফুটেজটি যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেখানে কেন মুছে ফেলা হয়েছে, সেটি তদন্তে বের করা হোক।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক সুমন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা গুলি করেছে, শনাক্ত করা যায়নি। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ফুটেজটিতে কী আছে, তা পাওয়া যায়নি। এরপরও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
আমবাগান ইউসেফ টেকনিক্যাল স্কুলসংলগ্ন রেললাইন লাগোয়া বস্তিতে বড় বোনের সঙ্গে থাকতেন নিহত আলাউদ্দিন। তাঁর সাড়ে চার বছরের মেয়ে জান্নাত আরা এখনো বুঝতে পারে না, তার বাবা নেই। আলাউদ্দিনের বোন জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই মারা যাওয়ার পর স্ত্রী দেশের বাড়িতে চলে যায়। গরিব বলে বিচার কি পাব না?’