দু-এক দিনের মধ্যে খাবার পাবেন আসামিরা

গত আড়াই বছরে আসামিদের দুপুরের খাবার বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। কিন্তু খাবার দেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম আদালতের মহানগর হাজতখানায় থানা থেকে আসা আসামিদের দু-এক দিনের মধ্যে সরকারি বরাদ্দের দুপুরের খাবার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। আজ রোববার তিনি প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, এত দিন কেন আসামিদের খাবার দেওয়া হয়নি, তা তদন্তে কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব দু-এক দিনের মধ্যে আসামিদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে আজ সকাল থেকে হাজতখানায় আসামিদের পানি ও শুকনা খাবার (কলা, পাউরুটি) দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) আরাফাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের দুপুরের খাবারের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক করতে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে। আপাতত আসামিদের শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা গরিব, অসহায় তাঁদের। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে যোগদান করেছেন। আগে কী হয়েছে জানেন না।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে কতজন আসামি হাজতখানায় আসবে তার সম্ভাব্য সংখ্যা হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে। সে অনুযায়ী তারা খাবার তৈরি করে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেবে। মাস শেষে তারা বিল দেবে। সে অনুযায়ী বিল উত্তোলন করে তাদের দিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাজতখানায় আসামিদের খাবার পরিবেশন ও এগুলো পরিষ্কার, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে নতুন করে দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে। সবকিছু গোছাতে কয়েক দিন সময় লাগবে। বছরের পর বছর যেটি হয়নি হঠাৎ সেটি চালু করতে একটু সময় লাগছে।

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার প্রথম আলোতে ‘আসামির খাবারের টাকা পুলিশের পকেটে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গত আড়াই বছরে আসামিদের দুপুরের খাবার বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বাস্তবে খাবার দেওয়া হতো না। আসামিদের দৈনিক খাবার বাবদ সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ১৫০ টাকা। থানা থেকে আদালতের হাজতখানায় আসা আসামিরা শুধু এক বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ পান ৭৫ টাকা।

ব্যবস্থা নিতে মানবাধিকার সংগঠনের চিঠি:
এদিকে আসামিদের খাবার না দিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আজ চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)।

সংগঠনটির মহাসচিব জিয়া হাবীব আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের খাবার না দিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না হয়, সে জন্য জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন