হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা নেই, কেন্দ্র আছে, প্রশিক্ষণ নেই

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি টাকার স্থাপনা তৈরি করছে। অনেকগুলো ব্যবহার ছাড়াই নষ্ট হচ্ছে।

২০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্মিত হয় ২০০৬ সালে। ব্যস, এটুকুই। হাসপাতালটি কোনো দিন চালু হয়নি। চালু করার জন্য যে জনবল দরকার, তা দেওয়া হয়নি। গত ৩১ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের কোন্ডায়।
ছবি: প্রথম আলো

১৬ বছর আগের কথা। ২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কোন্ডা ইউনিয়নে কোন্ডা ২০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই বছর ৭ জুলাই তিনি হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। দুটি অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান। ব্যস এটুকুই। হাসপাতালটি কোনো দিন চালু হয়নি।

এই হাসপাতালে গিয়ে গত ৩১ অক্টোবর দেখা যায়, চত্বরজুড়ে আগাছা। তিনটি ভবনের একটির সামনে পোশাক কারখানার আধা পোড়া বর্জ্য, ছাইয়ের স্তূপ। মূল ভবনের ইট ও সিঁড়ির রেলিং কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। পরিত্যক্ত এই হাসপাতালের বিষয়ে কথা বলার মতো সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।

তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালটি একটি বিচ্ছিন্ন জায়গায়, লোকালয় থেকে দূরে। সেখানকার অনেক জিনিস চুরি হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই হাসপাতাল চালু করার জন্য যে জনবল দরকার, তা নেই।’

‘অতীতে ১০ ও ২০ শয্যার অনেক হাসপাতাল করা হয়েছে পরিকল্পনা ছাড়াই, কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছায়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আর করা হবে না।
আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

এ তো গেল কেরানীগঞ্জে স্বাস্থ্যের একটি স্থাপনার কথা। ধামরাই উপজেলায়ও আছে এমন স্থাপনা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শ্রীরামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে কৃষ্ণনগর গ্রাম। সেই গ্রামে ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর কৃষ্ণনগর ২০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল মো. ফজলুর রশীদ মৃধা। ৩ একর জমির ওপর ছয়টি দোতলা ভবন নিয়ে এই হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে কোনো দিন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি।

ভিত্তিপ্রস্তরে ফজলুর রশীদ মৃধার নাম বড় হরফে লেখা। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামে। সেখানকার অধিবাসীরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, হাসপাতাল তৈরির জন্য এলাকার মানুষের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালটি এখন পরিত্যক্ত।

ফজলুর রশীদ মৃধা এখন অবসরে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জমি কেনা ও হাসপাতাল তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৮ কোটি টাকা। এই হাসপাতাল তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু জনবল ও যন্ত্রপাতি দেয়নি বলে হাসপাতালটি চালু হয়নি।

পড়ে থাকা স্বাস্থ্য স্থাপনার উদাহরণ মাত্র এই দুটি নয়। সারা দেশে আরও আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না, এমন স্থাপনা ২৩৩টি। কোনো স্থাপনায় একটি ভবন, কোনো কোনোটিতে ছয়-সাতটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১০ বা ২০ শয্যার হাসপাতাল যেমন আছে, তেমনি আছে ১০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল।

‘আমরা আশা করছি, আগামী বছর আমরা আটটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারব। পর্যায়ক্রমে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা হবে।’
অধ্যাপক আমিরুল মোরশেদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

এসব স্থাপনা নির্মাণে মোট কত ব্যয় হয়েছে, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়নি। তবে এক দিকে কিছু এলাকায় তৈরি স্থাপনা ব্যবহৃত হচ্ছে না বা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের অনেক উপজেলায় চিকিৎসকদের থাকার মতো ভালো ভবন নেই। খুলনা জেলার দক্ষিণের একটি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, আবাসনের ব্যবস্থা ভালো না হলে ওই প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসক রাখা কঠিন।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতীতে ১০ ও ২০ শয্যার অনেক হাসপাতাল করা হয়েছে পরিকল্পনা ছাড়াই, কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছায়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আর করা হবে না। তিনি বলেন, ‘বাকি প্রতিষ্ঠান চালু করতে কী পরিমাণ জনবল ও যন্ত্রপাতি লাগবে, তার একটি হিসাব তৈরি করার কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার।’

‘এতগুলো স্থাপনা পড়ে থাকা দুঃখজনক, হতাশাজনক। এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে দুর্বলতম দিক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদেরই তৈরি স্থাপনার ব্যাপারে চোখ বুজে আছে। জনবল, যন্ত্রপাতি দিচ্ছে না বলে অনেক স্থাপনা পরিত্যক্ত থেকে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এটা বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয়ও বটে।’
ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সার্বিক বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব

পড়ে থাকা ২৩৩ স্থাপনার হিসাব

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় অব্যবহৃত ও পড়ে থাকা স্বাস্থ্য স্থাপনার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় পড়ে থাকা স্থাপনার তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়। গত সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে। তাতে ২৩৩টি স্থাপনার কথা বলা হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৫৮টি, আর স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ১৭৫ টি।

স্বাস্থ্য স্থাপনা তৈরি করে সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি গণপূর্ত বিভাগ, অন্যটি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (অতীতে নাম ছিল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিট)। তারা বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নির্মাণকাজ করায়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন। চেষ্টা করেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে। স্থাপনা ব্যবহার হলো কি হলো না, সেটি তাঁদের দেখার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে সাম্প্রতিককালে ১৯৮টি স্থাপনা স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, এসব স্থাপনা বিগত সাত-আট বছরে তৈরি। তবে এসব প্রতিষ্ঠান কবে চালু হবে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আমিরুল মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী বছর আমরা আটটি প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারব। পর্যায়ক্রমে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা হবে।’

বাস্তব পরিস্থিতি

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলা সদরে তৈরি হয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)। একাডেমিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক হোস্টেল, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান।

৩১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের ভেতর থেকে তালা দেওয়া। ডাকাডাকির পর একজন ‘ব্যবস্থাপক’ ও একজন নৈশপ্রহরীকে পাওয়া যায়। ব্যবস্থাপক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি মো. সুমন মিয়া বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এই স্কুল তৈরি করেছে। তাঁদের দুজনের বেতন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেয়। স্কুলটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এটি চালু হবে, তা তিনি জানেন না।

সুমন মিয়া এটাও জানাতে পারলেন না যে এই স্থাপনার নির্মাণকাজ কবে শুরু ও শেষ হয়েছে। স্থাপনাটি ঘিরে সীমানাপ্রাচীর থাকায় সাধারণ মানুষ ও গরু-ছাগল ঢুকতে পারে না। তবে ঘাস ও আগাছায় পুরো চত্বর ভরে আছে। এই স্কুল নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ভবনগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। জমির দাম তিনি জানেন না।

এমন আরও দুটো প্রতিষ্ঠান আছে মানিকগঞ্জ সদরে। সদরের হিজুলি এলাকায় সাতটি ভবন নিয়ে তৈরি হয়েছে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)। অধিকাংশ ভবন তিনতলা, একটি ভবন চারতলা। এটির ফটকও বন্ধ ছিল। অনেক ডাকাডাকির পরও কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরও ঘাস ও আগাছায় জঙ্গলের মতো হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর আগেই নামফলক ভেঙে গেছে।

মানিকগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নয়াকান্দিতে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। এটি জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে ঘাস ও আগাছার পাশাপাশি বেশ কিছু পরিত্যক্ত গাড়ি দেখা যায়। নিপোর্টের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালে এই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০২১ সালে শেষ হয়। তবে এই ইনস্টিটিউট চালানোর মতো কোনো জনবল এখন নেই।

সাটুরিয়া, হিজুলি ও নয়াকান্দিতে নির্মাণ শেষে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নিজের জেলায়। তিনটি প্রতিষ্ঠাই হয়েছে তাঁর আমলে। এসব প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো জনবল নেই, প্রয়োজনীয় আসবাব নেই, যন্ত্রপাতি নেই। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাড়া পাওয়া যায়নি।

বরগুনায় ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালে সাততলা বিশাল ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ভবনের একটি অংশ ব্যবহার করা হয়। এখন করোনা রোগী নেই। ভবন পড়ে আছে।

অনেক সময় অপরিকল্পিতভাবেও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। সড়ক দুর্ঘটনার জরুরি রোগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা সেন্টার (সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র) তৈরি করা হয়েছে। এখন অধিকাংশ ট্রমা সেন্টার বেকার পড়ে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অব্যবহৃত স্থাপনার হিসাব পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এসব ট্রমা সেন্টার নেই।

এমনই একটি ট্রমা সেন্টার ২০০৫ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানে এখন চিকিৎসক রয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেন শুধু আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফারজানা আক্তার।

ফারজানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আট মাস আগে এই ট্রমা সেন্টারে যোগদান করেন। প্রথম দিকে দিনে পাঁচ থেকে সাতজন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসতেন। এখন নেন ২০ থেকে ২১ জন।

যদিও গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দী করে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, যে উদ্দেশ্যে এই ট্রমা সেন্টার করা হয়েছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। এখন শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগীকে সাধারণ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

‘এটা অপচয়’

সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এম এম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, অনেক সময় পরিকল্পনা করা ও তা বাস্তবায়নে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাঁদের ওপর নানাভাবে চাপ আসে। অন্যদিকে নির্মাণ, জনবল ও পরিচালনার সিদ্ধান্ত ও ব্যয় বরাদ্দ আসে ভিন্ন ভিন্ন ওপি (অপারেশনাল প্ল্যান) থেকে। স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে যতটা আগ্রহ দেখা যায়, অন্য ব্যাপারে ততটা আগ্রহ দেখা যায় না।

স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক সময় ব্যক্তির ইচ্ছায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার বা আধা সরকারিপত্র দেন। এরপর প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন নিয়ে নেন। জনবল, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি ছাড়া স্বাস্থ্যের কোনো প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব না। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়েই একের পর এক স্থাপনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া সব প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে যে পরিমাণ জনবল দরকার, তা দু–এক বছরে তৈরি করা সম্ভব নয়।

সার্বিক বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতগুলো স্থাপনা পড়ে থাকা দুঃখজনক, হতাশাজনক। এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে দুর্বলতম দিক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদেরই তৈরি স্থাপনার ব্যাপারে চোখ বুজে আছে। জনবল, যন্ত্রপাতি দিচ্ছে না বলে অনেক স্থাপনা পরিত্যক্ত থেকে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এটা বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয়ও বটে।’

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, বরগুনা এবং দাউদকান্দি (কুমিল্লা)]