কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় ছয়জনই খালাস
পাঁচ বছর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছিলেন কুয়েতপ্রবাসী একজন ব্যবসায়ী। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণায় সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। সপ্তম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শামছুল আরেফীন এ রায় দেন।
খালাস পাওয়া ছয় আসামি হলেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ, নগর ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক আবু নাছের চৌধুরী, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সদস্য এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম, নগরের শুলকবহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম নাজমুল আহসান এবং নিজেদের যুবলীগের কর্মী পরিচয় দেওয়া ইদ্রিস মিয়া ও ইমরান হোসেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাদী ছাড়া এই মামলায় আর কেউ সাক্ষ্য দেননি। বাদীও সাক্ষ্যে কিছু বলেননি। আসামিদের চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। সাক্ষীরা সাক্ষ্য না দেওয়ায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
মামলাটির বাদী বন্ধন নাথ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতে থাকেন তিনি। সেখানে তাঁর স্বর্ণালংকারের ব্যবসা রয়েছে। নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় জমি কিনে ২০১৬ সালে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে চাঁদাবাজির শিকার হয়েছিলেন তিনি। চাঁদার জন্য সন্ত্রাসীরা তাঁর পিঠে গুলি করেছিল। ৭০ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তাঁকে রেহাই দেওয়া হয়নি। এ ঘটনার একটি ভিডিও তখন ছড়িয়ে পড়েছিল।
মামলার আসামিরা খালাস পাওয়ার বিষয়ে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বন্ধন নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
বন্ধন নাথ নগরের পাঁচলাইশ থানায় দেবাশীষ নাথসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত শেষে পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর ২০১৯ সালের অক্টোবরে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরের বছর ১ জানুয়ারি আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। গত বছরের ২১ আগস্ট আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনাটি ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির। সেদিন কুয়েতপ্রবাসী বন্ধন নাথ নগরের পাঁচলাইশ ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে যান। এ সময় আসামিরা তাঁর কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। অপারগতা প্রকাশ করলে বন্ধন নাথকে মারধর করতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁর পিঠে গুলি করা হয়।
বন্ধন নাথ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার হুমকিও দেন আসামিরা। এর জেরে তিনি আসামিদের দেওয়া একটি স্ট্যাম্পে সই করেন। সেখানে প্রথম পক্ষ রাখা হয় বন্ধন নাথকে, দ্বিতীয় পক্ষ এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম। স্ট্যাম্পে ব্যবসায়িক লেনদেন বাবদ বন্ধন নাথের কাছে আসামিদের ১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দেখানো হয়। পাশাপাশি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক আসামিদের দেন বন্ধন নাথ।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ওই ঘটনার পর কুয়েতে চলে যান বন্ধন নাথ। সেখান থেকে তিনি নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে টাকা পাঠান। ওই বছরের ৫ মে আসামি দেবাশীষ নাথ চেক দিয়ে বন্ধন নাথের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ লাখ টাকা তোলেন। পরে বাড়ি নির্মাণের জন্য বন্ধন নাথের সঙ্গে চুক্তি করা আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিজাইন সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চেক জমা দিয়ে ৫৫ লাখ টাকা নেন আসামি এ কে এম নাজমুল আহসান, এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম, আবু নাছের চৌধুরী, মো. ইদ্রিস মিয়া ও মো. ইমরান হোসেন।
৭০ লাখ টাকা পেয়েও থেমে থাকেননি আসামিরা। পরে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ করতে গেলে আসামিরা বন্ধন নাথের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তখন বন্ধন নাথ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। পুলিশ দেবাশীষ নাথ ও এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের আদেশে তাঁদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবসায়িক লেনদেনের তথ্য পুলিশকে দেখাতে পারেননি আসামিরা।