বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
নেদারল্যান্ডস: শাসক নয়, বন্ধুর বিজয়
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিজয় বা মুক্তি সব সময় যুদ্ধের ময়দানে বারুদের গন্ধে আসে না; কখনো কখনো তা আসে কলমের কালিতে, পুরোনো মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে। ১৫ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের ‘কিংডম ডে’ বা ‘কোনিঙ্ক্রিজকসডাগ’। ১৯৫৪ সালের এই দিনে নেদারল্যান্ডসের তৎকালীন রানি জুলিয়ানা এক ঐতিহাসিক সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন, যার মাধ্যমে দেশটির ঔপনিবেশিক সম্পর্কের ইতি ঘটে এবং নতুন এক অংশীদারত্বের যুগের সূচনা হয়।
দিনটির গুরুত্ব বুঝতে হলে আমাদের তাকাতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পৃথিবীর দিকে। বিশ্বজুড়ে তখন উপনিবেশবিরোধী হাওয়া বইছে। ডাচ বা ওলন্দাজরাও বুঝতে পারছিল, পুরোনো কায়দায় আর শাসন চালানো সম্ভব নয়। তাই কোনো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছাড়াই তারা তাদের অধীন অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ ডিসেম্বরের সেই সনদের মাধ্যমে সুরিনাম (যা পরে পূর্ণ স্বাধীন হয়) ও নেদারল্যান্ডস অ্যান্টিলিসকে (বর্তমানে আরুবা, কুরাকাও ও সিন্ট মার্টেন) নেদারল্যান্ডসের সমান অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এটি ছিল এক কূটনৈতিক বিজয়। ‘শাসক ও প্রজা’র সম্পর্ক বদলে গিয়ে তা রূপ নেয় ‘একই রাজ্যের সমান সদস্যে’। নেদারল্যান্ডসের মূল ভূখণ্ডে দিনটি সরকারি ছুটির দিন না হলেও তাদের ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলোয় দিনটি অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। সেখানে বর্ণিল প্যারেড হয়, আর জনগণ তাদের স্বায়ত্তশাসন ও ডাচ রাজ্যের অংশ হওয়ার দ্বৈত পরিচয়কে উদ্যাপন করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে ডাচদের এই দিনের একটি পরোক্ষ মিল রয়েছে পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে। আমরা যেমন পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় এনেছি, নেদারল্যান্ডস সেখানে নিজেদের শোষকের ভূমিকা থেকে সরে এসে সমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এটি ছিল তাদের নিজেদের ঔপনিবেশিক অহংকারের বিরুদ্ধে এক বড় বিজয়। ১৫ ডিসেম্বর তাই মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেয়ে তা ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত আভিজাত্য ও স্থায়িত্ব লুকিয়ে আছে।