দেশের ২২৯টি নদী সংকটাপন্ন

জাতীয় নদী সম্মেলনে বাংলাদেশে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঢাকা, ২৬ মেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, দেশের ২২৯টি নদী সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এসব নদী এখনই দখল ও দূষণমুক্ত করা যাবে না। তবে সরকার ও সবাই মিলে চাইলে ৬৪টি জেলার একটি করে নদীকে দুই বছরের মধ্যে দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব।

রোববার জাতীয় নদী সম্মেলনে বাংলাদেশে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মূল বক্তব্যে উঠে আসে এসব কথা। তিনি জানান, সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নদী সংকটাপন্ন রংপুর বিভাগে, ৪৩টি। তা ছাড়া সিলেটের ৪২টি, খুলনায় ৩৭টি, বরিশালে ৩০টি, ঢাকায় ২৮টি, রাজশাহীতে ১৯টি, চট্টগ্রামে ১৭টি ও ময়মনসিংহে ১৩টি নদী সংকটাপন্ন।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, সবাইকে নিয়ে নদী রক্ষা করতে হবে। দেশের সব নদীর তথ্যভান্ডার তৈরি করতে হবে, যাতে প্রতিবছর নদী রক্ষায় কী অগ্রগতি হলো, তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। আর দেশের পরিবেশ, বন্য প্রাণীসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় যেমন আইন আছে, নদী সুরক্ষায় তেমন একটি আইন করতে হবে।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই বার্ষিক সম্মেলনে সারা দেশ থেকে নদী রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক ও কর্মীরা অংশ নেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ওয়াটার রাইটস ফোরাম, রিভারাইন পিপল, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল যৌথভাবে সম্মেলনের আয়োজন করে। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন ছিল রোববার।

নদী দখলমুক্ত করতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের অনেক সমস্যা আছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ। বালুর লোভ তো আমিও সামলাতে পারি না। কাকে দোষ দেব আমি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘নদী দখলকারীরা অপরাধী। এরা কখনো আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির হতে পারে না। সরকার তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখে। আমরা এই জায়গায় জিরো টলারেন্স। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের কাজ করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না অপরাধী, দখলদার ও দূষণকারীদের হাতে দেশের এত বড় গর্বের জায়গা নদীগুলো পরাজিত হোক। নদী রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

একমাত্র নদী দখলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে যান। যাঁরা নদী রক্ষার কথা বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন।
তুহিন ওয়াদুদ, নদী আন্দোলনের সংগঠক

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ বলেন, কারও একার পক্ষে নদী রক্ষা করা সম্ভব নয়। যাঁরা নদী রক্ষায় আন্দোলন করছেন, তাঁদের নিয়ে সরকার নদী সুরক্ষার পরিকল্পনা করছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নদী আন্দোলনের সংগঠক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘একমাত্র নদী দখলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে যান। যাঁরা নদী রক্ষার কথা বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। এতে দেশের নদী রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, দেশের নদীগুলো থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদীর পাড় ভাঙ্গাসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বালুমহাল ইজারা দেওয়ার নামে নদীগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এগুলো এখনই বন্ধ করতে না পারলে অনেক নদী দ্রুত মারা যাবে।

সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, শুধু আইন দিয়ে নদী দখল প্রতিরোধ সম্ভব নয়। দেশের নদী রক্ষার বিষয়ে কাজ করার আগে নদীর ধরন সম্পর্কে জানতে হবে, বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নদী শুধু নৌপথ নয়, এটি আমাদের কৃষি, জীবনযাপন ও প্রাণপ্রকৃতির সবচেয়ে বড় আধার। তাই নদী রক্ষার বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে চিন্তা করতে হবে।’

‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সম্মলনে আরও বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বেসরকারি সংস্থা রূপান্তরের শিল্পীরা পটের গানের মাধ্যমে নদী রক্ষার বিষয়টি তুলে ধরেন।