স্বপ্ন দেখতে হবে আকাশছোঁয়া, মানুষ হতে হবে মানবিক

কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

সকাল আটটা বাজার আগেই শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বগুড়ার জিলা স্কুল মাঠ। শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ। সাতসকালে নির্দিষ্ট বুথের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে উপহারসামগ্রী সংগ্রহ করছিল তারা। সবার হাতে কৃতিত্বের সনদ, ক্রেস্ট। ছবি তোলার নির্ধারিত ফ্রেমে একা, কখনোবা দল বেঁধে সহাস্যে ছবি তুলেছে। কাউকে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। ছোট ছোট দলে মাঠজুড়ে চলেছে আড্ডা। কয়েক মাস পর স্কুলজীবনের বন্ধু ও সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হওয়ায় একে–অপরকে জড়িয়ে ধরে কেউ কেউ।

এই চিত্র শনিবার সকালে বগুড়ায় অনুষ্ঠিত শিখো-প্রথম আলো জিপিএ-৫ কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। সংবর্ধনায় অংশ নিতে অনলাইনে নিজেদের নাম আগেই নিবন্ধন করেছিল ৩ হাজার ২৮০ শিক্ষার্থী। প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় কৃতী শিক্ষার্থীদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে ফ্রেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

সকাল আটটায় নির্ধারিত বুথ থেকে সনদ, ক্রেস্ট ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া। সকাল সাড়ে ৯টায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বগুড়া জেলা সংসদের সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলান শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। পরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত ও জাগরণের গান শোনান।

বগুড়া বন্ধুসভার সভাপতি সামির হোসেন ওরফে মিশুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আনোয়ার পারভেজ।
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী, কবি ও প্রাবন্ধিক বজলুল করিম বাহার, সরকারি শাহ এয়তেবারিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফারুক আহম্মেদ, বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ ও প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন।

সম্মাননা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার এই সাফল্য এইচএসসিতেও ধরে রাখতে হবে। বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে, সাফল্য অর্জনের জন্য বেশি করে সাধনা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে কবি বজলুল করিম বাহার বলেন, ‘তোমরা শুধু মেধাবী মুখ নও, আগামীর বাংলাদেশ। জীবনে সফল হতে হলে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। মানবিক মানুষ হতে হবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ বলেন, ‘শুধু মানবিক মানুষ হলে চলবে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন ও ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।’
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন তিন ‘ম’–কে না বলার অঙ্গীকার করান শিক্ষার্থীদের। তিন ‘ম’ হচ্ছে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদক।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছে শারমিন আখতার। ভীষণ উচ্ছ্বসিত শারমিন বলে, ‘নিবন্ধন করার পর এক মাস ধরে এই দিনটার জন্য প্রতীক্ষা করছিলাম। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল সকাল অনুষ্ঠানস্থলে চলে এসেছি। এখানে এসে উচ্ছ্বসিত। অনেক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, সনদ, ক্রেস্ট ও নাশতা পেয়েছি। আমাদের জন্য গানের আয়োজন করা হয়েছে। এভাবে সম্মান দেওয়ায় আমি আবেগাপ্লুত, রোমাঞ্চিত।’

অনুষ্ঠানে গানের তালে তালে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া চ্যানেল আই খুদে গানরাজের রায়া শার্মিলা রাফতি অনুষ্ঠানে সম্মাননা নেওয়ার পর মঞ্চে মাতিয়েছে গান গেয়ে। রাফতি জানায়, ‘অনেক মঞ্চে গান গেয়েছি। কিন্ত এখানে গান গাওয়ার অনুভূতি অন্য রকম। যে অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পেয়েছি, সেখানে অনেক বন্ধু-সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাদের জন্যই গান গেয়েছি। এমন অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।’
অনুষ্ঠানে মেধাবীদের অনুপ্রেরণা দিতে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিন্নধারার কোরিওগ্রাফিসহ আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন তৌফিকুল আলম টিপুর নেতৃত্বে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যারের শিল্পীরা। এ ছাড়া একুশে পদক পাওয়া কণ্ঠশিল্পী মো. খুরশীদ আলম ‘চুমকি চলেছে একা পথে, ‘প্রেমের দরজা খোলো না’, ‘বন্দী পাখির মতো’সহ জনপ্রিয় বেশ কিছু গান শোনান। সুকুমার বাউল শোনান ‘বলবো না গো, ‘আপন মানুষ চেনা বড় দায়’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন আরটিভি ইয়াং স্টার স্বর্গ্য তৌহিদ, ম্যাজিক বাউলিয়ানা ঐশী রানী দৃষ্টি, সান্ত্বনা এবং ব্যান্ড বি-বয়েজ।

অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছিলেন না প্রথম আলোর আলোকচিত্রী সোয়েল রানা। একের পর এক শিক্ষার্থীদের ছবি তুলছিলেন তিনি। অনেক শিক্ষার্থীর ছবি তোলার আবদারও পূরণ করেন।