জামদানির ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়োজন শুদ্ধ ধারাবাহিকতা

‘বর্তমানের সচেতন প্রয়াসই সুনিশ্চিত করবে জামদানির ভবিষ্যৎ’ আলোচনা সভায় বক্তারা। বাঁ থেকে নীলুফার করিম, আইয়ুব আলী, লুভা নাহিদ চৌধুরী, হামিদা হোসেন, শেখ সাইফুর রহমান, চন্দ্র শেখর সাহা ও সাইদা রোকসানা খান। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, ২৩ জুলাইছবি: প্রথম আলো

জামদানি বয়নের বয়স ৪০০ বছরের বেশি। নানা প্রতিকূলতার পরও টিকে আছে এই শিল্প। কিন্তু ভুল নকশা, ভিন্ন সুতা বা মেশিনে তৈরি কাপড় নষ্ট করছে জামদানির আদি ঐতিহ্য। এ জন্য প্রয়োজন শুদ্ধতা রক্ষা, বুননশিল্পীর মর্যাদা, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও সংরক্ষণের উদ্যোগ।

জামদানি উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‌‘বর্তমানের সচেতন প্রয়াসই সুনিশ্চিত করবে জামদানির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ হামিদা হোসেন। তিনি বলেন, শুধু জামদানি নয়, সব রকম তাঁতির কাজেই পরিবর্তন এসেছে নানা পর্বে। জামদানি নকশার বর্ণনা বুননের সময় দেওয়া হয় মুখে মুখে। কোথাও লেখা থাকে না। ফলে এ শিল্পের নকশায় নতুন অনেক কিছু সংযুক্ত করে দেওয়া সহজ, যা আদি জামদানির ঐতিহ্য নষ্ট করে। তাই জামদানির ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে এ শিল্প খাত থেকে সস্তা শ্রম বাদ দিতে হবে। স্বীকৃতি আসতে হবে শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সব নারীর কাজের।

বেঙ্গল ফাউন্ডশেনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, কারুশিল্প বা বুননশিল্প—দুটোই বুননকারীর সহজাত জ্ঞান থেকে আসে, যা তৈরি হয় প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরে। সেখানে নানা রকম বাণিজ্যিক প্রলোভনে শুদ্ধতা নষ্ট হতে পারে, এ জন্য প্রয়োজন তথ্য-চিত্র সংরক্ষণ করা। একই সঙ্গে জামদানি ও টেক্সটাইল নিয়ে পৃথক জাদুঘর হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান সাংবাদিক ও জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান। ‘বর্তমানের সচেতন প্রয়াসেই সুনিশ্চিত হবে জামদানির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের প্রবন্ধে তিনি মোগল আমলে ভারতবর্ষে জামদানিশিল্পের আগমনের ইতিহাস থেকে বর্তমান সময়ের তথ্য তুলে ধরেন। সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সময়, বৈশিষ্ট্য, বয়নসংস্কৃতি, ধারাবাহিকতা, স্থান মাহাত্ম্য মিলিয়ে জামদানি স্রেফ তাঁতে বোনা কাপড় নয়। জামদানি বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক।

শেখ সাইফুর রহমান বলেন, জামদানির শুদ্ধতা বজায় রাখার পূর্বশর্ত হলো এর উপকরণ, নকশা ও বয়নপদ্ধতির যথাযথ ব্যবহার। যার সব কটিই অনেকভাবে নষ্ট হচ্ছে। খাঁটি জামদানির প্রতিপক্ষ হিসেবে মেশিনে তৈরি বিদেশি জামদানি বা হ্যান্ডলুম জামদানিকে দাঁড় করানো হচ্ছে, যা আদি জামদানির ঐতিহ্য নষ্ট করছে।

একটা প্রদর্শনী কেমন করে জামদানিশিল্পকে আবার সামনে নিয়ে আসতে পারে, সে উদাহরণ দেন জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের প্রেসিডেন্ট এবং প্রদর্শনীর কিউরেটর চন্দ্র শেখর সাহা।

এ ছাড়া জামদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মসলিন এবং বর্তমান বাণিজ্যব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন সেবার নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোকসানা খান এবং তাঁত বোর্ডের মসলিন প্রকল্প পরিচালক মো. আইয়ুব আলী।

১৯ জুলাই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয়েছে অনন্য বয়নে জামদানি উৎসব। ২০০ বছর আগের জামদানি শাড়ি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এ প্রদর্শনীতে। ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী।