পুলিশ কর্মকর্তারা কে, কেন, কী পুরস্কার পেলেন

পুলিশের মতিঝিল বিভাগে গত এক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩০০টি বড় ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়। এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেন উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রকাশিত একটি প্রকাশনায় এ তথ্য জানিয়ে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর একটি রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তখন নেতা-কর্মীরা পুলিশ কর্মকর্তা হায়াতুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে হায়াতুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। পরে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। হায়াতুল ইসলামের সাহসিকতা, কর্মদক্ষতা ও প্রশংসীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম–সাহসিকতা) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জামিল হাসান সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচনের আগে বরিশাল রেঞ্জের সব জেলা–ইউনিটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। তিনি নির্বাচন কমিশন, বিভাগীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ নির্বাচনের সব অংশীজনকে সমন্বয় করেন। এতে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। তাঁর কর্মদক্ষতা, সততা ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম–সেবা) পরিয়ে দেওয়া হয়।

গতকাল রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হায়াতুল ও জামিলের মতো ৪০০ পুলিশ সদস্যকে গত এক বছরের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পরিয়ে দেন। এর মধ্যে অসিমসাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতির জন্য ৩৫ পুলিশ সদস্য পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ এবং ৬০ জন পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’।

গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন, অপরাধনিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ জন পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ২১০ জন পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’।

পুলিশ সপ্তাহ, ২০২৪ উপলক্ষে পদক পাওয়া ৪০০ পুলিশ সদস্যকে নিয়ে একটি প্রকাশনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩৫ জনের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলার জন্য ১০ জনকে বিপিএম সাহসিকতার পদক দেওয়া হয়েছে। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু দায়িত্ব পালন করার জন্য ১২ জন বিপিএম সেবা পদক পান।

এ ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলায় সাহসিকতার জন্য ৯ জনকে পিপিএম এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনের জন্য ১৫ জন পিপিএম পদক পান।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন) মো. হায়দার আলী খান এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম সেবা পদক পেয়েছেন। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি থাকার সময় একাদশ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনসহ পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর কর্মদক্ষতা, সততা ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম সেবা পদক পান।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম (লজিস্টিকস) এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম সেবা পদক পেয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিএমপির সংসদীয় আসনের নির্বাচনকালীন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পর্যালোচনা ও চিহ্নিত করেছেন। ডিএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিবসের শোভাযাত্রা, ডিএমপি সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাজসজ্জা, আসন ব্যবস্থাপনা ও সাজসজ্জা করা হয়েছে তাঁরই তত্ত্বাবধানে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) মো. মাজহারুল ইসলাম পেয়েছেন বিপিএম সেবা পদক। ওই প্রকাশনায় বলা হয়, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অবদান রেখেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের জন্য অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক বিভিন্ন আধুনিক মানসম্মত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। কর্মদক্ষতা, সততা ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিপিএম সেবা পদক পান তিনি।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাওয়া রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আবদুল বাতেনকে এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম সেবা পদক দেওয়া হয়েছে। পুলিশের প্রকাশনায় বলা হয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল প্রচেষ্টা চালায়। এ সময় রেঞ্জ ডিআইজি বাতেনের নেতৃত্বে রেঞ্জ পুলিশ সরাসরি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে নাশকতার সব পরিকল্পনা বানচাল করে। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেন তিনি।

ডিএমপি পুলিশ সদর দপ্তরের উপকমিশনার মো. আবু ইউসুফ গত বছরের ২৮ অক্টোবর একটি রাজনৈতিক দল ও সমমনা দলের মহাসমাবেশের নামে সহিংসতা ও জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি থেকে সফলভাবে জানমালের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কাছাকাছি স্থানে সমাবেশ আহ্বান করায় অতীতের মতো বড় সহিংসতার আশঙ্কা থেকে সার্বিক কার্যক্রম তদারক করেন। এই প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে বিপিএম পদক দেওয়া হয়।

এ পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র মো. ইনামুল হক সাগর প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর প্রথমে বীরত্বপূর্ণ ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে। সংশ্লিষ্ট ইউনিট থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে দরখাস্ত পৌঁছার পর এ নিয়ে গঠিত কমিটি বিপিএম ও পিপিএম পদক বাছাই করে। পরে পুলিশের মহাপরিদর্শক চূড়ান্ত করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সেখান থেকে পদকের ওই তালিকা অনুমোদন করা হয়।