বড় অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটিই করল তদন্তের সুপারিশ

কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কাজ ছিল অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া। কমিটি কিছু অভিযোগের ক্ষেত্রে অনিয়ম-অসংগতির তথ্য পেলেও বড় অভিযোগগুলোর বিষয়ে নতুন করে তদন্তের সুপারিশ করেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বরে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি করেছিল ইউজিসি। কমিশনের তৎকালীন সদস্য (বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) অধ্যাপক মো. আবু তাহেরকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছিল এ কমিটি। কমিটির অপর দুই সদস্য ইউজিসির কর্মকর্তা।

ইউজিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি জমা হওয়ার পর সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি প্রতিবেদন দেখেননি।

ইউজিসির কাছে সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ৫৩৭ কোটি টাকার ‘মেগা প্রকল্পের’ অভিযোগগুলোর (দরপত্রের তথ্য ফাঁস, ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ না হওয়া, নতুন ভবনগুলোর পাইলিং–সংক্রান্ত অনিয়ম) বিষয়ে ‘কিছু অসংগতি’ দেখা গেছে। এ প্রকল্পের ৯টি ১০ তলা নতুন ভবনের পাইলিংয়ের দৈর্ঘ্য (গভীরতা) কমানো হয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ইউজিসি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্যোগে অনুমোদিত ভবনের নকশা পরিবর্তন করে পাইলিংয়ের গভীরতা কমানো হয়। এ বিষয়ে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগকেও অবহিত করা হয়নি। এ ছাড়া পাইলিংয়ের নকশা করার ক্ষেত্রে সয়েল টেস্ট লোড ক্যাপাসিটি এবং ভবনের নকশার স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো তথ্য যথাযথ নয়।

কমিটি মনে করে, যে পাইলগুলোর গভীরতা কমানো হয়েছে, সেগুলো ভবনের ভার নিতে পারবে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করে কমিটি।

এ বিষয়ে ইউজিসির কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, ভবনগুলোর নকশা পরিবর্তন করাসহ অনুমোদনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা যথোপযুক্ত নয়। এ ছাড়া প্রকল্পের চলমান কাজ যথাযথ তদারকির স্বার্থে পাইলিংসহ বিভিন্ন ধাপের নির্মাণকাজের ভিডিও সংরক্ষণ করা উচিত।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের সর্বশেষ চলতি বিলে দুটি আইটেমে প্রায় সোয়া ছয় কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল প্রদান–সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। সত্যতা যাচাইয়ে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়ে প্রকল্প ও আর্থিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষায়িত তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে তারা।

নিয়োগ, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে যে কথোপকথন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল বা ছড়িয়েছে, সেটি বর্তমান উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের কি না, তা যাচাইয়ে শব্দ–বিশেষজ্ঞসহ অন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া জরুরি বলেও মনে করে কমিটি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংবিধি (প্ল্যানিং কমিটির কার্যবিবরণী) অনুযায়ী, বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি ও অনুমোদিত পদ বা সাময়িক শূন্য পদ পূরণের প্রস্তাব দেওয়া এবং শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ ও সদস্যদের নাম প্রস্তাব করবে প্ল্যানিং কমিটি। তদন্ত কমিটি বলছে, সংবিধির এ দুটি শর্ত পূরণে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে কোন ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটেছে, তা সুনির্দিষ্ট করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা পদে অনুমোদিত পদের চেয়ে বেশিসংখ্যক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির আপগ্রেডেশন নীতিমালায় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি থাকায় বিদ্যমান জনবল খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৯ আগস্ট ২৫৫তম সিন্ডিকেট সভায় শর্ত সাপেক্ষে বেতন বাড়ানোর অর্থাৎ উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, এটি জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ ও সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাই সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরি বলে মনে করে কমিটি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল প্রকল্পে উপাচার্য আবদুস সালামের ব্যক্তিগত সম্পদ তদারকিতে তিন নিরাপত্তা প্রহরীর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, তা আদায় করে সমন্বয় করা জরুরি বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। ওই প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পদ নেই। ওই সম্পদ উপাচার্যের ব্যক্তিগত বলে কমিটি মনে করে। তাই তিন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগে যে অর্থ খরচ হয়েছে, তা উপাচার্যের কাছ থেকে আদায় করে সমন্বয় করার সুপারিশ করেছে কমিটি।