২৩ জেলায় ‘ডিডিএস কিট’ নেই 

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২২ ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর কার্টন ‘ডিডিএস  কিট’ সরবরাহের দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের। 

মা ও শিশু
প্রতীকী ছবি

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঠিক সময়ে ওষুধ কিনছে না। এতে গ্রামীণ মা ও শিশুরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২৩টি জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুদের চিকিৎসায় দেওয়া ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর (ডিডিএস কিট) মজুত শেষ হয়ে গেছে।

এই তথ্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর গত জানুয়ারি মাসেও কোনো ওষুধ কেনা হয়নি বলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে ২২ রকম ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী দেওয়া হয়। এমন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী ডিডিএস কিট (ড্রাগ অ্যান্ড ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট কিট) নামে পরিচিত।

সারা দেশে ডিডিএস কিট সরবরাহ করা হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাতৃ, শিশু, প্রজনন ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচি থেকে। এই কর্মমূচির লাইন ডিরেক্টর জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিডিএস কিটের মজুত শেষ হয়নি। ডিডিএস কেনার দায়িত্ব কার, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা কারও একার দায়িত্ব নয়। এটা সম্মিলিত দায়িত্ব। 

লোকবল আছে, স্বাস্থ্যসেবাকাঠামো আছে  অথচ মানুষ সেখানে গিয়ে সেবা ও ওষুধ পাচ্ছে না। এটা কেন হলো, কাদের জন্য হলো? যাঁরা এই  পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, যাঁরা  মানুষকে সেবাবঞ্চিত রেখেছেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার।
আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ

সরকারি তথ্য কী বলে

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সূত্রে পাওয়া তালিকায় দেখা যায়, ডিডিএস কিটের মধ্যে ট্যাবলেট ১৩ ধরনের, ক্যাপসুল ২ ধরনের, ওষুধের গুঁড়া ২ ধরনের, তরল ওষুধ ২ ধরনের, ১ ধরনের মলম। এ ছাড়া থাকে মুখে খাওয়ার স্যালাইন ও জিঙ্ক। এসব সামগ্রী রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাম ও কার্টন থাকে। এটাই ডিডিএস কিট। একটি কিটে সব ওষুধ একই পরিমাণে থাকে না। যেমন ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট থাকে এক হাজার। অন্যদিকে ডক্সিসিলিন ক্যাপসুল থাকে ১০০টি। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে এসব কিট মাসে দুবার পাঠানো হয়।

সরকারের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ২৩টি জেলায় ডিডিএস কিটের মজুত শূন্য ছিল। এর মধ্যে ছিল দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, জামালপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুষ্টিয়া, পাবনা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুমিল্লা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৪২টি উপজেলা গুদামে ডিডিএস কিটের মজুত ছিল শূন্য, ১৫১টি উপজেলা গুদামে শিগগির মজুত শূন্য হবে এবং ১৪৪টি উপজেলা গুদামে স্বল্প মজুত আছে। 

সাধারণ অসুখে গ্রামের মায়েরা নিজেদের জন্য এবং কেউ কেউ শিশুসন্তানের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে ওষুধ নেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে চিকিৎসক থাকেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে থাকেন পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী। এসব কেন্দ্রে ওষুধ না থাকার অর্থ সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেক মা ও শিশু সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা বিনা মূল্যে ওষুধ পাচ্ছে না। তাদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকবল আছে, স্বাস্থ্যসেবাকাঠামো আছে অথচ মানুষ সেখানে গিয়ে সেবা ও ওষুধ পাচ্ছে না। এটা কেন হলো, কাদের জন্য হলো? যাঁরা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, যাঁরা মানুষকে সেবাবঞ্চিত রেখেছেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার।’