রিকশাচালকদের ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সামনের সড়কে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় দুটি রিকশা ভেঙে যায়। এর মধ্যে একটি রিকশার চালকের পা ভেঙে যায়। এ ঘটনা দেখে প্রাইভেট কারটি আটকে চালককে মারধর করেন শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে রিকশাচালকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে তুলে দেন প্রাইভেট কারের চালক। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ১৫ হাজার টাকা দুই রিকশাওয়ালাকে দিয়ে বাকি ১০ হাজার টাকা (ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ) আত্মসাৎ করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ বুধবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রাইভেট কারের চালক ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মো. সেলিম মোল্লা (৬১)। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র নাজমুল হাসান ওরফে রুপু ও পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. তারেকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি। এর মধ্যে নাজমুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক। তবে তারেকের সাংগঠনিক পরিচয় জানা যায়নি।

লিখিত অভিযোগে সেলিম মোল্লা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমি ও আমার স্ত্রী খাদিজা আক্তার এবং ছেলে রুবায়েত হাসানসহ আমার প্রাইভেট কারে করে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে পৌঁছার পর গাড়িটি ব্রেক ফেল (নিয়ন্ত্রণ হারানো) করে। গাড়িটি রাস্তার পাশে গতিরোধকে আলতোভাবে ধাক্কা লাগিয়ে আমি গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করি। তখন নাজমুল হাসান, মো. তারেকসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১৫ জন ছাত্র বেআইনিভাবে আমার প্রাইভেট কারসহ আমাদের সবাইকে আটক করেন। তাঁরা আমাকে ও আমার স্ত্রী-সন্তানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রড দিয়ে আঘাত করেন এবং কিল-ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করেন।’

অভিযোগে সেলিম আরও বলেন, ‘নাজমুল হাসান আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। তারেক তাঁর হাতের হেলমেট নিয়ে আমার মাথায় সজোরে আঘাত করে থেঁতলানো জখম করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমার পকেটে থাকা সাত হাজার টাকা ও গাড়ির চাবি এবং লাইসেন্স নিয়ে যান। আমি গাড়ির চাবি ও লাইসেন্স ফেরত চাইলে তাঁরা আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে তাঁদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাঁদের পুনরায় আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই। তখন আমি অভিযুক্তদের কাছ থেকে গাড়ির চাবি ও লাইসেন্স পাই এবং শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এ বিষয়ে মামলা করলে আমাকে হত্যার হুমকি দেন অভিযুক্তরা।’

অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে কি না, জানতে আজ সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেলিম মোল্লা শহীদুল্লাহ্ হলের সামনের সড়কে দুটি রিকশার ওপর দিয়ে তাঁর প্রাইভেট কার নিয়ে যান। এতে দুটি রিকশাই ভেঙে যায়, এক রিকশাচালকের পা ভেঙে যায় এবং এক যাত্রীর মাথা ফেটে যায়। ঘটনাটি দেখে হলের শতাধিক শিক্ষার্থী সড়কে জড়ো হন। তাঁরা সেলিমকে মারধর করছিলেন। আমি শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করে বিষয়টি মীমাংসা করে দিই। রিকশাচালকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সেলিম মোল্লা ২৫ হাজার টাকা দেন। যে রিকশাচালকের পা ভেঙেছে, তাঁকে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। অন্য রিকশাচালককে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাকি ১০ হাজার টাকা হলের কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা রেখে দেন। এটাই মূল ঘটনা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা যেন এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়। অপরাধী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কোনো সাংগঠনিক পদ দেওয়া হবে না।’