ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছেন, সেই লড়াই অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে কোনো আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না। কিন্তু কোনো ‘প্রক্সি’ বা সহিংসতার ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশে’ বক্তারা এসব কথা বলেন। ডাকসু, ইনকিলাব মঞ্চ, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, আপ বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল–সংগঠনের নেতারা এই সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশ থেকে শাহবাগ মোড়কে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করেন ডাকসুর ভিপি ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ‘ওসমান হাদির খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
এর আগে দুপুরে শাহবাগ মোড়ের সড়কে জুমার নামাজ আদায় করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে ইমামতি করেন মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী। মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী, ইসলামী বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীও দুপুরে শাহবাগে এসেছিলেন।
দুপুরের পর ডাকসু ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতাদের নেতৃত্বে শাহবাগ মোড়ের জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। আর মোড়ের মাঝখানে সমাবেশ করতে থাকেন গণ অধিকার পরিষদ, আপ বাংলাদেশ, জাগপাসহ বিভিন্ন দল–সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। পরে অবশ্য দুই পক্ষ একসঙ্গে সমাবেশ করে। তখন জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনের মঞ্চ থেকে বক্তব্য দেন বক্তারা।
বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে নানা স্লোগানে মুখর ছিল শাহবাগের এই সমাবেশ। স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ প্রভৃতি।
ডাকসুর জিএস ও শিবিরের নেতা এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, দিল্লির তাঁবেদারি এই দেশে আর চলবে না। ইন্ডিয়া–ব্যাকড কোনো মিডিয়া চলতে পারবে না, ইন্ডিয়া-ব্যাকড কোনো রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
সমাবেশে অংশ নিয়ে আইনজীবী শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমাদের একবিন্দু রক্ত থাকতে ভারতীয় আধিপত্য মেনে নেব না।’ তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘ওসমান হাদির যে লড়াই, আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হাদির সেই লড়াই আমরা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। এই দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের কোনো জায়গা নেই। তবে কোনো প্রক্সি বা সহিংসতার ফাঁদে আমরা পা দেব না।’
স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের দেশের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়। আমরা এবার প্রতিরোধ নয়, প্রতিহিংসার আশ্রয় নেব। ভারতকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা আওয়ামী সেবাদাসদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মুনতাছির আহমাদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ। সমাবেশস্থলেই আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন বিক্ষোভকারীরা।
সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক জাহিদুল ইসলাম সমাবেশে খালি গলায় সংগীত পরিবেশন করেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ডাকসুর নেতা মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও যুবাইর বিন নেছারী।
২২ ঘণ্টা পর সচল হলো শাহবাগ
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পর থেকে শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেট ও পল্টন অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকাল থেকেই হাদি হত্যার বিচার চেয়ে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। জুমার নামাজের পর ভিড় আরও বাড়ে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর প্রায় ২২ ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় দিয়ে আবারও যান চলাচল শুরু হয়। সমাপনী বক্তব্যে ডাকসুর জিএস বলেন, ‘আগামীকাল (শনিবার) দুপুরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে সেখান থেকে আধিপত্যবাদবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আমরা শাহবাগ অভিমুখে আসব।’ ওসমান হাদির জানাজায় সবাইকে অংশ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।