হাইকোর্টে গ্রামীণ কল্যাণের রিটের বিষয়বস্তুর ওপর পুনঃশুনানির নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

পাঁচটি করবর্ষের বিপরীতে পুনর্মূল্যায়নে ৬০০ কোটির বেশি টাকা কর দাবি ঘিরে কর কমিশনারের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে গ্রামীণ কল্যাণের করা রিটের মূল বিষয়বস্তুর ওপর পুনঃ শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ রায় দেন।

গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ কল্যাণের করা পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বছর পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। হাইকোর্টের রায় বাতিল এবং ওই লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আজ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, পুনর্মূল্যায়নের পর ২০১২–১৩, ২০১৩–১৪, ২০১৪–১৫, ২০১৫–১৬ ও ২০১৬–১৭—এই করবর্ষের জন্য গ্রামীণ কল্যাণের কাছে প্রদেয় কর দাবি করেন অতিরিক্ত কর কমিশনার। এই অর্থের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার বেশি। আইনি প্রক্রিয়ায় এ নিয়ে করদাতা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল কিংবা রিভিশন আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। রিভিশন করতে হলে আপিল করা হবে না বলে উল্লেখ করতে হয়। অতিরিক্ত কর কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল না করে গ্রামীণ কল্যাণ কর কমিশনারের কাছে রিভিশন আবেদন করে। অতিরিক্ত কর কমিশনারের সিদ্ধান্ত যথাযথ হওয়ায় ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর কর কমিশনার গ্রামীণ কল্যাণের রিভিশন আবেদনগুলো খারিজ করে আদেশ দেন। এই আদেশে ভুলবশত প্রদেয় আয়কর ‘অপরিশোধিত’ পরিবর্তে পরিশোধিত উল্লেখ থাকায় তা সংশোধন করে একই বছরের ২৭ নভেম্বর একটি আদেশ দেন কর কমিশনার।  

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, কর কমিশনারের পৃথক আদেশের বৈধতা নিয়ে গ্রামীণ কল্যাণ ২০১৭ সালে হাইকোর্টে পৃথক রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। রায়ে কর কমিশনারের আদেশ বাতিল করা হয়। বিলম্ব মার্জনা করে শর্তসাপেক্ষে আইন অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে গ্রামীণ কল্যাণকে আপিল (অতিরিক্ত কর কমিশনারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে) করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয় রায়ে। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে এনবিআর। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত হয়। পরে এনবিআর পৃথক লিভ টু আপিল করে, যা আজ নিষ্পত্তি হলো।

আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি। অন্যদিকে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও সরদার জিন্নাত আলী।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রিভিশন করতে হলে আপিল করার অধিকার ছেড়ে দিতে হয়। অর্থাৎ বলে দিতে হয় যে, আপিল করবে না। রিভিশনে গ্রামীণ কল্যাণ হারে। হারার পর হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট আপিল করার সুযোগ দেন। কিন্তু আপিল করার অধিকার ত্যাগ করেই গ্রামীণ কল্যাণ রিভিশন করে। হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়ে বিষয়বস্তুর ওপর হাইকোর্টকে শুনানি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ। অর্থের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার বেশি।