গ্রন্থ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৩ দিনের নজরুল উৎসব

নজরুল উৎসবের শেষ দিন ‘নজরুলসঙ্গীত: তথ্য, ভাব ও সুরসন্ধান’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব। (বাঁ থেকে) জয়ন্ত রায়, লাইসা আহমদ লিসা, আলী এফ এম রেজোয়ান, ভীষ্মদেব চৌধুরী, মফিদুল হক, খায়রুল আনাম শাকিল, লায়েকা বশীর। ছায়ানট মিলনায়তন, ঢাকা, ২৬ মেছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে।

নজরুলের গানের ভাব, তথ্য ও সুরসন্ধান—সব মিলেই নজরুলের গানের চর্চা প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের গবেষণায় ছায়ানট প্রকাশিত ‘নজরুলসঙ্গীত: তথ্য, ভাব ও সুরসন্ধান’ গ্রন্থটি নজরুল–গবেষক ও সংগীত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতিচর্চাকেন্দ্র ছায়ানট আয়োজিত তিন দিনের নজরুল উৎসবের শেষ দিনের আয়োজনে উঠে এল এসব কথা।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের তৃতীয় দিনের আয়োজন। সম্মেলক নৃত্যগীত ও ১০টির বেশি একক সংগীত পরিবেশনার আগে প্রথম পর্বে মোড়ক উন্মোচন করা হয় ‘নজরুলসঙ্গীত: তথ্য, ভাব ও সুরসন্ধান’ গ্রন্থের।

স্বাগত বক্তব্যে শিল্পী ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ বলেন, ‘ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন দীর্ঘদিন ধরে নজরুলের গানের ভাব সন্ধানের কাজটি করতে চেষ্টা করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় নজরুলের ৫০টি গানের ভাব ও সুর সন্ধানের কাজ। জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিতীতে এই বই প্রকাশ করতে পারায় ছায়ানট আনন্দিত।’

বরেণ্য রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সন্‌জীদা খাতুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মফিদুল হক। এটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত বরেণ্য নজরুল সংগীতশিল্পী সোহরাব হোসেনকে।

ছায়ানটের উপদেষ্টা ও গবেষক মফিদুল হক সম্পাদনা প্রসঙ্গে বলেন, নজরুলের গানের পাঠ নিয়ে অনেক পাঠভেদ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকতা ছিল; যা নজরুলের গানের জন্য ছিল না। ছায়ানট সব সময়ই রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নজরুলের গানের শিক্ষণ গুরুত্বের সঙ্গে করে আসছে। সেই ঐতিহ্য কাজ করেছে এই গ্রন্থ সম্পাদনায়।

নজরুল উৎসবের শেষ দিনে সংগীত পরিবেশন করা হয়। ছায়ানট মিলনায়তন, ঢাকা, ২৬ মে
ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে।

গ্রন্থ সমন্বয়ের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শিল্পী লায়েকা বশীর বলেন, ২০১৬ সালে কাজী নজরুলের দুটি গানের উল্লেখ করে সন্‌জীদা খাতুন তাঁকে সে গানের ভাব সম্পর্কে লিখতে বলেছিলেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নজরুলের গানের ভাব সন্ধানের কাজ।

আনুষ্ঠানিকভাবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী পাঠ বিশ্লেষণ করে বলেন, এর আগে ছায়ানট থেকে ‘গীতবিতান তথ্য ও ভাব সন্ধান’ প্রকাশিত হয়েছে। নজরুলসংগীত যাঁরা শিখবেন, নজরুলের গানের বাণী নিয়ে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য আজ প্রকাশিত বইটি গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রন্থের সুর সন্ধানের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আলী এফ এম রেজওয়ান বলেন, যা মনোরঞ্জন করে, তা–ই রাগ। তবে দীর্ঘদিন আগে যে ভাব নিয়ে রাগ তৈরি হয়, তার সন্ধান করা অনেক দুরূহ।

গ্রন্থের তথ্য সংগ্রহের কাজটি করেছেন কামরুল হায়দার পিন্টু। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী অশোক কর্মকার। ‘নজরুলসঙ্গীত: তথ্য, ভাব ও সুরসন্ধান’ গ্রন্থটির পরিবেশক নবযুগ প্রকাশনী।

শেষ দিনের অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনার মাঝেমধ্যে সেসব গানের রাগ, সুর নিয়ে ব্যাখ্যা করেন ছায়ানটের সহসভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল এবং ছায়ানটের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।

২৪ মে থেকে শুরু হয়েছিল ছায়ানটের নজরুল উৎসব। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনের এ আয়োজনে আমন্ত্রিতসহ অংশ নিয়েছেন ১৬০ জন শিল্পী। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ উৎসব।