আপিল বিচারাধীন এমন কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না: দুদকের আইনজীবী

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান
ফাইল ছবি

দুই বছর বা তার বেশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, আপিল বিচারাধীন আছে, এমন কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন অবস্থায় দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য—এমন অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ রোববার প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, যেমন খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগ সাজা বাড়িয়েছেন। হাজি সেলিমের বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে। হাইকোর্ট বহাল রেখেছেন। তিনি লিভ টু আপিল করে জামিনে আছেন, জরিমানাও স্থগিত আছে। তাঁদেরও একই অবস্থান। তাঁরা দণ্ডিত ও সাজাপ্রাপ্ত।

হাইকোর্টের রায়ের ফলে তাঁরা কেউই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না—এটি আইনের ব্যাখ্যা। যদি না এটি পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টে রদ, রহিত বা পরিবর্তিত হয়।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, হাইকোর্টের আদেশের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হওয়াসংক্রান্ত সংবিধানের ৬৭(১)(ঘ) অনুচ্ছেদ নিয়ে ব্যাখ্যা। তিনি বলেন, যদি কেউ সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় দুর্নীতির মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ আপনা–আপনি শূন্য হয়ে যাবে বলে আদেশে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে ওই ব্যক্তি সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন না। হাইকোর্টের রায় অনুসারে কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জামিনে থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্য হবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত আদালতে তাঁর সাজা বাতিল হয়। হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে এটিই প্রতিষ্ঠিত হলো। হাইকোর্টের ওই ব্যাখ্যা সবার জন্য কার্যকর। তাই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, আপিল বিচারাধীন এমন কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

আপিল বিচারাধীন অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে বিএনপির ৫ নেতা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারার সঙ্গে ৫৬১এ ধারায় হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেছিলেন। একসঙ্গে শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এ নিয়ে হাইকোর্টের ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আদেশ রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের পুরোপুরি বিপরীত। আদালত বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তি জামিনে আছেন নাকি আদালতের আদেশে তার সাজা স্থগিত হয়েছে—এটি কোনো বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দণ্ড ও সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল না হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেতে পারেন না। শুধু আপিল বিচারাধীন—এর অর্থ এই নয় যে দণ্ডিত ব্যক্তি নিষ্পাপ হিসেবে গণ্য হবেন। যদি না সেগুলো উপযুক্ত আদালতে বাতিল হয়।

দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই

পূর্ণাঙ্গ আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা সরল পাঠে এটি স্পষ্ট যে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা ঘোষণার পর আপিল করা হলে আপিল আদালত সেই সাজা স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু ওই ধারায় সাজা স্থগিত করার কোনো বিধান নেই।

আদেশের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে সাজা স্থগিত হলো না, কিন্তু দণ্ডিত ব্যক্তি জামিন পেলেন—এ ক্ষেত্রে সাজা স্থগিত হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিতের বিধান দেখা যাচ্ছে না। তাই আবেদনকারীদের দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর দেওয়া এক আদেশে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে দণ্ড (কনভিকশন) স্থগিতের সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দেন। এক মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড, সাজা ও জরিমানা স্থগিত চেয়ে এক আইনজীবী ওই আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দিয়েছিলেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এখানে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই। আদালত বলেছেন, দণ্ড হচ্ছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যেখানে একজন বিচারক কাউকে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে সিদ্ধান্ত দেন। সেখানে দোষী হলে শাস্তি হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। দণ্ড (কনভিকশন) ও সাজা (সেনটেনস) দুটি ভিন্ন বিষয়। যেহেতু আবেদনকারী (আইনজীবী) জামিনে আছেন, তাই সাজা স্থগিতের প্রশ্ন নেই। ওই আবেদনটি ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। তবে আবেদনকারী আইনজীবীর জরিমানা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।