চট্টগ্রাম নগরে অবরোধ প্রত্যাহার, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কে এখনো অবস্থান

কোটা সংস্কারের এক দাবিতে ও পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি–রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কেই অবস্থান আছেন। কোনো যানবাহন চলছে না। তবে রাত আটটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে সরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ক্যাম্পাসের ১ নম্বর গেট এলাকায় যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজ বিকেল চারটার দিকে নগরে টাইগারপাস এলাকায় বাংলা ব্লকেডের চতুর্থ দিনের রেল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে আন্দোলনকারীদের পুলিশ বাধা দেয়। লাঠিপেটা করে। পরে আন্দোলনকারীরা টাইগার পাস থেকে ২ নম্বর গেট গিয়ে জড়ো হন। সেখানেও পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি–রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের ব্যানারে চতুর্থ দিনের মতো বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানান তাঁরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের হামলায় তাঁদের চার থেকে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একজন ছাত্রীর খোঁজ পাচ্ছেন না। তাঁরা এ হামলার নিন্দা জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা থেকে উঠবেন না।

তবে লাঠিপেটা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান। সন্ধ্যা ছয়টায় ২ নম্বর গেট এলাকায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জনদুর্ভোগ কমাতে টাইগারপাস এলাকায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা (আন্দলনকারীরা) ব্যারিকেড ভেঙে এখানে এসেছে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ক্যাম্পাসে অবরোধ

নগরের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসসংলগ্ন চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি–রাঙামাটি মহাসড়কও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ হামলার বিচার না করা পর্যন্ত তাঁরা অবরোধ চালিয়ে যাবেন।

ক্যাম্পাসের অবরোধে থাকা শিক্ষার্থী ইখলাস বিন সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নগরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সাতজন সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৫ জুন নির্দেশনাসহ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন।