আগের দিন খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের গাড়ি থেকে চাল কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যান নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন। তাই গতকাল বুধবার সকাল সাতটায় হাজির হন চাল কিনতে। যদিও ততক্ষণেই তৈরি হয়েছে চাল কিনতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি। তবে চাল, আটা বিক্রির গাড়ি তখনো এসে পৌঁছায়নি।
ষাটোর্ধ্ব মোজাম্মেল হোসেন চাল কিনতে হাজির হয়েছিলেন জেলা শহর মাইজদীর সুধারাম থানাসংলগ্ন সড়কের পাশে। ওই এলাকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে দুটি পিকআপভর্তি পণ্য নিয়ে সকাল পৌনে নয়টার দিকে ওএমএসের দুই ডিলারের প্রতিনিধি হাজির হন। তবে দুটি গাড়ি আসার আগেই সেখানে জড়ো হন প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই নারী। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অনেকে ফুটপাতে বসে পড়েন। পেশায় দিনমজুর মোজাম্মেল বলেন, ‘আয়রোজগার তেমন নেই। বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনব, তেমন সামর্থ্য নেই। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে সারা দিন অপেক্ষা করেও যদি চাল পাওয়া যায় সে আশায় এসেছি।’
সকাল নয়টার দিকে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু হয়। দীর্ঘ সময় সারিতে দাঁড়িয়ে দুপুরের দিকে পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা কিনতে সমর্থ হন মোজাম্মেল হোসেন।
মোজাম্মেল চাল-আটা কিনতে পারলেও সকাল আটটায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র হাজির হয়েও চাল কিনতে ব্যর্থ হয়েছেন শহরের হাসপাতাল সড়ক এলাকা থেকে আসা শিল্পী আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িতে দুধের বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে এসেছিলাম। চাল পাইনি, তবে আটা কিনতে পেরেছি। বেশি দরকার ছিল চালের।’
শিল্পী আক্তার আরও বলেন, তাঁর স্বামী রিকশা চালান। স্বামীর আয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এর ওপর বন্যায় বেশির ভাগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বামী টিকমতো রিকশাও চালাতে পারছেন না। তাই কম দামে চাল কেনার আশায় সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন।
গতকাল ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের গাড়ি দুটির কাছে অবস্থান করে দেখা গেছে, কম মূল্যে চাল ও আটা সংগ্রহ করতে এসেছেন হতদরিদ্রের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষও। এমনই একজন আবুল খায়ের। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সংগতি নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা দরে, সেখানে ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্র থেকে নিলে দাম পড়ে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। একইভবে বাজারে খোলা আটার কেজি ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। এখানে ২৪ টাকা। এ কারণেই এখানে আসা। কিন্তু এখানেও সরবরাহ সীমিত। তাই অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকেও চাল-আটা পাওয়া যায় না।’
ওএমএসের পৌরবাজার এলাকার পরিবেশক মেসার্স তানভির খলিলের প্রতিনিধি শান্ত দত্ত বলেন, তাঁরা প্রতিদিন ৬২৫ কেজি চাল ও ৬২৫ কেজি আটা বরাদ্দ পান। চাল ও আটা দুটো একই ব্যক্তিকে দিলে দিতে পারেন ১২৫ জনকে। আর কেউ চাল, কেউ আটা নিতে চাইলে বেশি মানুষকে দেওয়া যায়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই চাল ও আটা দুটোই নিতে চান। এ কারণে খুব বেশি মানুষকে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার লাইনে ৩০০ এর মতো মানুষ ছিল। ১০০ মানুষকেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহর মাইজদীতে ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্র আছে ১০ টি। কিন্তু পরিবেশক আছেন ১৭ জন। আগে বিক্রয় কেন্দ্রও ১৭টি ছিল। বছরখানেক আগে বিক্রয়কেন্দ্র কমিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু পরিবেশক বহাল রাখা হয়। এখন একেকজন পরিবেশক বরাদ্দ পান ৬২৫ কেজি চাল ও সমপরিমাণ আটা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রতিটি ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রের বিপরীতে এক মেট্রিক টন করে চার ও আটা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। জেলা শহরে বিক্রয়কেন্দ্রের তুলনায় পরিবেশকের সংখ্যা বেশি। এ কারণে মোট বরাদ্দকে সব পরিবেশকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক পরিবেশক ৬২৫ কেজি চাল ও ৬২৫ কেজি আটা বরাদ্দ পান। এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রেই মানুষজনের প্রচুর ভিড়। বিষয়টি তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন। স