যে ছেলেকে ঘিরে দিনবদলের স্বপ্ন, তাঁর এমন বিদায় মেনে নিতে পারছেন না চা বিক্রেতা বাবা

মো. আল ইমরান নামের এই তরুণ গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা এক তরুণীও মারা গেছেন।
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রতিদিনের মতো গতকাল বিকেলেও মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন মো. আল ইমরান ওরফে ইফতি। অন্যান্য দিন রাত ১০টার মধ্যে বাসায় ফিরতেন। মাঝেমধ্যে দেরি হলে ফোনে বাসায় জানিয়ে দেন। কিন্তু গতকাল সোমবার রাত ১০টা পার হলেও বাসায় ফেরেননি। সাড়ে ১০টার দিকে বাবা মুসা মোল্লার কাছে ফোন আসে। যে ফোন বয়ে এনেছে ছেলের মৃত্যুসংবাদ।

চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কে গতকাল রাতে একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ইমরানের মোটরসাইকেলের। এতে ইমরান (২৩) ও তাঁর সহপাঠী নাহিদা সুলতানা (২১) মারা যান। দুজনই চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর কেউ একজন ফোন করে মুসা মোল্লাকে ছেলের দুর্ঘটনার সংবাদ দেন। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান তিনি।

ইমরানের বাসা নগরের সদরঘাট থানার দারোগাহাট বাইলেনে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাসার সামনে কথা হয় তাঁর বাবা মুসা মোল্লার বাসার সঙ্গে। তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। ছেলের লাশ তখনো হাসপাতালের মর্গ থেকে বাসায় আসেনি।

মুসা মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের লাশের অপেক্ষায় আছি। গতকাল আসরের নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হয় ইমরান। প্রতিদিন ১০টার দিকে ফিরে আসে। রাতে আমি নিজেও কামাল গেট এলাকায় ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সেখানে ছেলের দুঃসংবাদটি পাই।’

চার ভাইয়ের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয়। বড় ভাই থাকেন ঝালকাঠিতে গ্রামের বাড়ি। স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে দারোগাহাট বাইলেনের ভাড়া বাসায় থাকেন মুসা মোল্লা। বাসার কাছেই ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালান। ছেলেদের মধ্যে একমাত্র ইমরানই পড়াশোনা করছিলেন। মাঝেমধ্যে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন।

মুসা মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান চার বছর ধরে বাইক চালাচ্ছিল। নিজের জমানো টাকা ও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাইকটি কিনেছিল। ভাড়ায় বাইক চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাত। মাঝেমধ্যে কিছু টাকা সংসারেও দিত। তাকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।’

ইমরান সিটি কলেজ ছাত্রলীগের বৈকালিক শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গতকাল সোমবার সকালে শ খানেক ছাত্র কলেজের সাবেক এক ছাত্রনেতার বাড়ি পটিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দুপুরে খাবারের একটি প্যাকেট নিয়ে বাসায় ফিরেছিলেন ইমরান। বাসায় ফিরে সেই খাবার খেয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মা ফাতেমা বেগম আগে থেকে অসুস্থ। রাতে ছেলের দুঃসংবাদ পেয়ে একেবারেই ভেঙে পড়েন। এখন কেবল কান্না করছেন।

ইমরানের সঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত নাদিয়া চট্টগ্রাম সিটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী বলে জানা গেছে। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ায়। নগরের আকবারশাহ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

মুসা মোল্লা বলেন, ইমরানের কিছু স্থায়ী যাত্রী ছিলেন। প্রয়োজন হলে তাঁরা ফোন করে তাঁকে ডেকে নিতেন। নাদিয়াও মাঝেমধ্যে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইমরানকে ফোন করতেন। কিন্তু গতকাল আর ফিরলেন না।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে ইমরান ও নাদিয়ার মরদেহ হাসপাতালের মর্গ থেকে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে ছেলের লাশ নিয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশে রওনা দেন মুসা।